রবি কুমার ঝা: ‘টাকা পাঠান, নাহলে আপনার সমস্ত ছবি-ভিডিও পর্ণ সাইটে আপলোড করে দেওয়া হবে, ছড়িয়ে দেওয়া হবে সামাজিক মাধ্যমেও’, সোশ্যাল সাইটে অচেনা বান্ধবির ভিডিও কল রিসিভ করেই বিপত্তি! ব্যক্তিগত দুর্বলতার ভান্ডাফোঁড় করার হুমকি দেখিয়ে টাকা আদায়ের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে চলছে আর্থিক প্রতারণা। বর্তমানে এমন বহু ঘটনাচক্রে যুব সমাজের অনেকেই হারিয়েছেন নিজের সম্মান, অর্থ ও জীবন।
যুব সমাজ বলতেই অজানাকে জানার ইচ্ছা, না পাওয়া কে পাওয়ার ইচ্ছায় উন্মাদ। আর এই উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়েই অনলাইনের যুগে রমরমিয়ে বাড়ছে প্রতারণার চক্র। আপনার দুর্বলতার সুযোগে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি নিয়ে তা খারাপ কাজে লাগানোর কথা বলে তার বিনিময়ে চাওয়া হচ্ছে মোটা টাকা। সম্মান রক্ষার্থে কেউ টাকা দিচ্ছেন। আবার কেউ তা দিতে না পেরে মানসিক চাপে তাকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে হচ্ছে। গোটা দুনিয়ার পাশাপাশি এই ব্যাধির আগ্রাসনে বাদ নেই রাজগঞ্জও। জলপাইগুড়ি জেলার এই ব্লকেও এর আগমন ঘটেছে লোক চক্ষুর আড়ালে।
উঠতি বয়সের যুবক থেকে বিবাহিত লোক, যে কেও এর ফাঁদে পড়তে পারেন অনায়াসে। প্রশ্ন টা হল – কিভাবে? আপনি যদি ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ বলতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম বা ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করেন, সেখানে আপনার সমস্ত তথ্য আছে নিশ্চয়ই। আপনার ছবি, বয়স; আপনি কি করেন, কোথায় থাকেন, কাকে বিয়ে করেছেন ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য। হঠাৎ আপনার কাছে একটি মেয়ের প্রোফাইল থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসল আপনি তার ছবি দেখে অ্যাকসেপ্ট করে নিলেন। কথা শুরু হল; সে আপনাকে বলল ‘আমি ফেসবুক বেশি করিনা হোয়াটস অ্যাপ করি, আপনার নাম্বারটা দিন। আপনি অবলা নারী ভেবে দিয়ে দিলেন। তারপর আপনি বা সে আপনাকে ভিডিও কল করল, আপনি সেই মেয়েটির সত্যতা যাচাই করার জন্য ফোনটি ধরলেন। কিন্তু তার পরই শুরু হয় আসল গল্প।
মেয়েটির ভিডিও কলের পেছনে রয়েছে পুরো সেটআপ, যে আপনাকে তারা কিভাবে জালে জড়াবে। এই সময় আবেগটাকে একটু সামলে মাথাটাকে কাজে লাগাতে হবে। কারণ কি জানেন? আপনি যাই কথা বলছেন, যা করছেন তার রেকর্ডিং চলছে উল্টো দিকে – আপনার অজান্তে। আপনি ফাঁদে পড়ে গেলে আপনার কাছে মেসেজ আসবে আমাকে টাকা পাঠাও নাহলে ফেসবুকে তোমার পরিচিতদের পাঠিয়ে দেব তোমার সব ছবি ও ভিডিও। সেই পরিচিত, যাদের আপনি রিলেসন অপশনে রেখেছেন – আর যেই বন্ধুরা আপনার ছবিতে প্রতিনিয়ত কমেন্ট দেয়। ভেবে দেখুনতো আপনার মানসিক অবস্থাটা কি দাড়াবে সে সময়? আপনি হয়ত টাকা দেবেন কিন্তু সে হুমকি বেড়েই যাবে দিন দিন। আপনি এই কথাগুলো কাওকে বলতে না পেরে নিজের চিন্তায় এমন ভাবে ফেঁসে যাবেন যে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পাবেন না। আর তার পরেই হয়ত আপনি এমন কিছু একটা করে বসবেন যেটা আপনার করা উচিত নয়।
ভারতে বিগত ২০২০ সালে ৫০,০৩৫ টি সাইবার ক্রাইমের মামলা দায়ের করা হয়েছে। রিপোর্ট না করা মামলা গুলো আমাদের অনেকের মধ্যেই চাপা পড়ে রয়েছে। অনেকের ব্যাংক একাউন্ট খালি হয়েছে, অনেকে জীবনও হারিয়েছে এই কারণে। এই একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বে ফিফথ জেনারেশন ওয়ারফেয়ার সাইবার ক্রাইমের বৃহত্তর রূপ। যেখানে একটি কম্পিউটারে পেছনে বসে গোটা মুম্বাই শহরকে অন্ধকারে রেখে দিয়েছিল হ্যাকাররা ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। আপনি ভাবছেন হয়ত আপনার সাথে এসব হবেনা। কিন্তু এটা আপনার ভুল ধারণাও হতে পারে। বিগত কিছু দিনে রাজগঞ্জ মত জায়গায় এরকম বহু ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে; কিছুটা নজরের বাইরেও থেকে গেছে। হয়ত আপনার সাথে বা আপনার বন্ধুর সাথে এসব ঘটেছে। তবে সম্মান রক্ষার্থে কাওকে বলে ওঠা হয়নি। সরকার সাইবার শোষন ও অপরাধ রুখতে বিগত দিনগুলোতে অনেক জনসচেততা মূলক অভিযান চালিয়েছে যাদের মধ্যে রয়েছে OTP , সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি ও তথ্য আদান প্রদান না করার আহ্বান।
পরিশেষে যেই কথাটি প্রয়োজনীয় তা হল আপনি আবেগের বসে কোনো ভুল করার আগে একবার ভেবে নিন। আপনি যার সাথে কথা বলছেন সে কি বিশ্বাস যোগ্য? ছেলে – মেয়ে নির্বিশেষে এই সমস্ত মানুষ আপনার কাছে অর্থ আদায়ের জন্য যে কতটা নিচে নামতে পারে তা আপনার ধারণার বাইরে। তাই সচেতন থাকুন, শান্তিতে থাকুন।