রাজগঞ্জ: বাবার অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছে ছেলে। আর্থিক অভাবকে সঙ্গী করেই মোহনবাগানের হয়ে খেলার সুযোগ পেল বেলাকোবার স্টেশন কলোনীর ছেলে সমীর (১৪)। এই খবরে উচ্ছ্বসিত বেলাকোবাবাসী। খবর পেয়েই বাড়িতে ছুটে গেলেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়। কিছু আর্থিক সাহায্য করে আগামী দিনে পাশে থাকার বার্তাও দিলেন তিনি।
মা রান্নার কাজ করেন। বাবা ডিম বিক্রি করে সংসার চালান। অর্থাভাব হলেও নিজেদের একমাত্র ছেলেকে মানুষ করতে দিনরাত পরিশ্রম করেন দুজনেই। এদিকে ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ। অনুপ্রেরণা সমীরের বাবা শিবু দে সরকার। তিনি জানান, তারও খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল। চেয়েছিলেন খেলোয়াড় হতে। তবে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাই একমাত্র ছেলেকে সেদিকে উৎসাহ দিয়েছেন। শিবুবাবুর কথায়, তাঁর অধরা স্বপ্নই যেন ছেলে পূরণ করতে লেগেছে। সমীরেরও এব্যাপারে আগ্রহের কমতি ছিল না কখনই। ফলস্বরুপ অনুর্দ্ধ ১৫ বিভাগে মোহনবাগানের হয়ে খেলার সুযোগ পেল সমীর।
বেলাকোবা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সমীর। তাঁর ইচ্ছে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ফুটবল খেলার। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই বেলাকোবার হাইস্কুল মাঠে ফুটবলের প্রশিক্ষণ নিতে যেত সমীর। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গাতে ফুটবল খেলে সমীরের ঝুলিতে জোগাড় হয়েছে একাধিক ট্রফি। কয়েকমাস আগেই সমীর অনুর্দ্ধ ১৫ ইয়ুথ আইলিগের ট্রায়াল দিয়েছিল। সেখান থেকে সমীর মোহনবাগান ফুটবল টিমে সুযোগ পায়। এরপর কলকাতায় খেলতে যায় সমীর। সেখানে অনুর্দ্ধ ১৫ মোহনবাগানের হয়ে ম্যাচ খেলে। চ্যাম্পিয়ানও হয় সেই ম্যাচে। বতর্মানে কিছু দিনের জন্য সমীর ছুটিতে বেলাকোবায় আছে। সম্ভবত দোল উৎসবের পরপর দলের তরফে ডাক আসলেই সমীরকে আবার কলকাতায় যেতে হবে।
সমীরের প্রাপ্তিতে খুশী সমীরের প্রশিক্ষক শুভ দাসও। তাঁর কথায়, গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা সমীর তার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দু’বছর ধরে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এভাবেই খেলে গেলে আগামীতে অনেক বড় খেলোয়াড় হতে পারবে। সেইসঙ্গে শুভ দাস পারিবারিক আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথাও জানালেন। শুভ’র বক্তব্য, বতর্মানে সমীরের ইচ্ছে পূরনে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে আর্থিক সমস্যা। কলকাতায় যাতায়াত এবং সেখানে থাকা খাওয়ার খরচ বহন করার সামর্থ্য তাদের নেই।
শনিবার সমীরের খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে ছুটে যান বিধায়ক খগেশ্বর রায়। তাঁর কথায়, বাইচুং, পেলে-র মত বড় খেলোয়াড় তৈরি হোক। শুভেচ্ছা রইল। সেই সঙ্গে আগামীতে পাশে থাকার বার্তা দিলেন তিনি।
সমীরের বাবা শিবু দে সরকার জানান, ছেলে আরও এগিয়ে যাক তা চাই। তবে সামর্থ্য সীমিত। সমীরের মা বিউটি দে সরকার দুঃখের সুরে বলেন, ‘ওর বাবা ডিম বিক্রি করে আর আমি মানুষের বাড়িতে রান্না করি। এই করেই কোনওমতে সংসার চলে। সমীরের খেলার খরচ বহন করব কি করে?
সমীরের পরিবারের সমস্যার কথা জানতে পেরেই আবির মিত্র, রাজু দে সরকার সহ সমীরের স্কুলের শিক্ষকেরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের সাহায্যেই সমীর কলকাতায় যেতে পেরেছিল। এই বিষয়ে বেলাকোবা ইয়ুথ কোচিং সেন্টারের সেক্রেটারি সুকুমার রায় বলেন, সবাই মিলে ওকে আর্থিক দিক দিয়ে সাহায্য করছি, ভবিষ্যতেও করব। পাশাপাশি তিনি বলেন, যদি প্রশাসনিক কিংবা সদহৃদয় ব্যাক্তি সমীরকে সহযোগিতা করে তাহলে ওরা উপকৃত হবে।