রাজগঞ্জ: রাজবংশী ভাষায় কমেডি ভিডিও বানিয়ে উত্তরবঙ্গে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল আগেই। এবারে ইউটিউবের তরফেও সম্মান পেল ‘পুরানা খিলাড়ি’-রা। স্বীকৃতি হিসেবে হাতে পেলেন সিলভার প্লে বাটন। এই প্রথম রাজগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় রাজবংশী ভাষায় কমেডি ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবের স্বীকৃতি পেলেন রাজগঞ্জ ও বেলাকোবার ৫ বন্ধু। কৃষক পরিবার থেকে উঠে এলেও অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা এবং লোক হাসানোর ক্ষমতার জোরে উত্তরবঙ্গের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছেন লাবণ্যদের রাজবংশী পুরানা খিলাড়ি। টিভিতে সিরিয়াল দেখার মতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তাদের ভিডিও। পরিবারের তরফে শুরুতে সমর্থন না থাকলেও মানুষের ভালোবাসা দেখে পাশে দাঁড়িয়েছেন বাবা-মায়েরাও। ইতিমধ্যেই প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ ভিউ পেয়েছে ইউটিউবে। চ্যানেলে ১ লক্ষ সাব্সক্রাইবার হওয়ায় স্বীকৃতি হিসেবে এবার পেলেন সিলভার প্লে বাটন।
শুরুটা দেড় বছর আগে ২০২১-এর মে মাসে। আর পাঁচটা সাধারণ ঘরের মতই কলেজ শেষে ভালো চাকরির খোঁজ করে সবে কাজ শুরু করেছিলেন রাজগঞ্জের কুকুরজান অঞ্চলের ডাঙ্গাপাড়ার লাবণ্য দেব রায়। তারপরই শুরু হয় করোনার অচলাবস্থা। বাড়িতে বসে কাজ করতে হত। ওই সময় ঘরে থেকে বিনোদনের অভাব সামনে আসে। সেই থেকেই মানুষের মধ্যে বিনোদন পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসেন ৫ বন্ধু। রাজবংশী ভাষায় গ্রাম বাংলার রোজকার ঘটনা নিয়ে তৈরি কমেডি ভিডিও মন জয় করেছে সকলের। সাড়া পড়েছে উত্তরবঙ্গজুড়ে। শুরুর দেড় বছরের মধ্যেই ইউটিউবের তরফে বিরাট সম্মান পেলেন ৫ বন্ধু। এই কাজে এখন আরও দুই মেয়ে সিতা এবং অনুশ্রী যোগ দিয়েছেন।
তাদের এই লোক হাসানোর উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে, রাজবংশী পুরানা খিলাড়ি। শুরু করেছেন ৫ বন্ধু। তাদের নামগুলি হল লাবণ্য, সমীর, পিন্টু, জয় এবং বিট্টু। প্রথম দুজন রাজগঞ্জের কুকুরজান অঞ্চলের বাসিন্দা এবং পরের ৩ জন বেলাকোবা অঞ্চলের। প্রত্যেকের বয়স ২০ থেকে ২৮-এর মধ্যে। লাবন্যই সবার থেকে বড়। তাদের উদ্যোগের নাম রাজবংশি পুরানা খিলাড়ি কেন? প্রশ্ন করতে উত্তর মেলে, এই পুরানা খিলাড়িটা হল লাবণ্য নিজেই। শুরুতে লাবণ্য একাই টিকটক ভিডিও করতেন। সেই ভিডিও ভালোই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তবে মাঝে মাধ্যমটি এদেশ থেকে তুলে দেওয়া হয়। তবে ওটুকু সময়ের মধ্যেই যা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, তাতে ইউটিউবে জায়গা করে নিতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। শুরুর প্রায় দেড় বছরের মধ্যে ওই ইউটিউব চ্যানেল ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ সাবসক্রাইব করে ফেলেছেন।
করোনার অচলাবস্থায় যখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন, সেই সময় ঘরে ঘরে বিনোদন যোগান দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন ৫ বন্ধু। রাজগঞ্জ এবং বেলাকোবার কৃষক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ওই ৫ যুবক তখন ভাবতে পারেননি এত অল্প সময়ের মধ্যে উত্তরবঙ্গের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। রাজবংশী ভাষায় এলাকাভিত্তিক চরিত্র সাজিয়েই দৈনন্দিন জীবনের মজার মজার ঘটনা উপস্থাপন করে চলেছেন তাঁরা। বড় বড় চ্যানেলের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের মতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাদের অভিনয়। বর্তমানে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক পান যুবকেরা।
শুরুতে কেউ কলেজে পড়ছিলেন না হয় এদিক সেদিক ছোটখাটো কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জীবনের সঠিক দিশা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এমন সময় পাঁচ বন্ধু মিলেই এই কাজ শুরু করেন। চাষাভূষা পরিবারের সীমিত আর্থিক অবস্থার মধ্যেই তাদের এই সাহসী উদ্যোগে পাশে ছিলেন পরিবারের লোকেরাও। প্রায় দেড় বছরের টানা প্রচেষ্টার পর মিলল সাফল্য। ইউটিউবে পক্ষ থেকে সম্মান দেওয়া হল ৫ যুবকের এই উদ্যোগকে। শুক্রবার সিলভার প্লে বাটন হাতে পেয়েছেন তাঁরা। এই উদ্যোগের মূল কাণ্ডারি লাবণ্য দেব রায় জানায়, এপর্যন্ত তাদের চ্যানেলে ১ কোটি ৭৩ লক্ষ ৩৮ হাজার ভিউ এসেছে।
লাবণ্যরা জানায় তাদের পরিবার মূলত কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। বাড়ি থেকে প্রথমটায় সহযোগিতা না পেলেও ক্রমশ তারাও বুঝতে পারেন তাদের অভিনয় দক্ষতার কথা। লোকমুখে নাম হয় বিস্তর। বাড়ি বয়ে লোক আসতে থাকে ছবি তোলার জন্য। কাজ শুরু করে তারা এতটা জনপ্রিয়তা পাবেন সেটা কখনোই ভাবনা মধ্যেও ছিল না। শুধুমাত্র লোক হাসানোর তাগিদেই এই কাজ শুরু করেছিলেন তারা। ইউটিউবের পক্ষ থেকে সম্ভবত ব্লকের মধ্যে এই ক্ষেত্রে তারাই প্রথম সিলভার প্লে বাটন পেলেন। যার ফলে তাদের মধ্যে উৎসাহ আরও বেড়ে গিয়েছে। আগামী দিনে অভিনয় জগতে পা রাখতে চান পাঁচ বন্ধু।
এই ব্যাপারে লাবণ্যের বাবা ললিত কুমার রায় বলেন, প্রথমটায় একেবারেই সমর্থন করিনি। বারবার বলেছি, এসব না করে কাজের ব্যাপারে মন দিতে। তবে স্বপ্নেও ভাবিনি, তাদের এই অভিনয় দক্ষতা সকলের নজর কাড়বে। এখন তাদের কাজে পরিবারের তরফে বাধা নেই। সমীর বর্মণের মা কল্পনা বর্মণ বলেন, ছেলে যে এত ভালো অভিনয় জানে তা জেনেই তাঁরা অবাক। তাদের পরিবারের কেউই কোনোদিন অভিনয় করেননি।