অমানবিক! টাকা নেই, মরা মায়ের দেহ কাঁধে তুলে নিলেন ছেলে-স্বামী

জলপাইগুড়ি: শেষ সঞ্চয় ঢেলে মায়ের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন, কিন্তু প্রাণ রক্ষা হয়নি। এদিকে মায়ের দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে ভাড়ার টাকা না দিতে পারায় নিয়ে যেতে রাজি হল না কোনও অ্যাম্বুল্যান্স। মাতৃবিয়োগের শোক বুকে চেপে বাধ্য হয়ে দেহ কাঁধে তুলে নিলেন বাপ ব্যাটা। দিনে দুপুরে সকলের সামনে মায়ের দেহ চাদরে মুড়ে ওভাবেই রওনা হলেন প্রায় ৫০ কিমি দূরে বাড়ির পথে। এমনই অমানবিক ছবি ধরা পড়ল জলপাইগুড়ি শহরে। পরিবারের দাবি, দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা চান স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স। টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই। তাই বাধ্য হয়ে এভাবেই মায়ের দেহ নিয়ে যাচ্ছেন ছেলে ও ‘বুড়ো’ স্বামী।

বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির রাস্তায় দেখা যায়, একটি দেহ চাদরে পেঁচিয়ে কাঁধে নিয়ে চলেছেন বছর চল্লিশের ছেলে এবং সত্তর ঊর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। রাস্তার পাশে অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখছেন সেই ছবি। কিছুটা গিয়ে হাঁপিয়ে পড়েছেন, দেহ রাস্তায় নামাচ্ছেন। সাংবাদিকরা খোঁজ করতে জানা যায়, মর দেহটি ক্রান্তি ব্লকের বাসিন্দা লক্ষীরানি দেওয়ানের। বুধবার জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। জলপাইগুড়ি থেকে ক্রান্তি প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে। দেহ নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স যা দাম চেয়েছিল, সেই টাকা তাদের কাছে নেই। তাই দেহ কাঁধে তুলে নেন ছেলে ও স্বামী। পাশেই হেঁটে যাচ্ছিলেন এক মহিলা। সাত সকালে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার এই করুন ছবি নাড়া দিয়েছে অনেককেই। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে হাসপাতালের ভেতর যারা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স এবং শহবাহী গাড়ির পরিষেবা দিয়ে থাকেন, তাঁদের দর হাঁকানো নিয়েও। অভিযোগ উঠছে, সেখানে একটি দালালচক্র কাজ করে। শেষ পর্যন্ত খবরটি পৌঁছয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এগিয়ে আসেন। জলপাইগুড়ির এই ঘটনা নিয়ে ইতি মধ্যেই দোষারোপের পর্ব শুরু হয়েছে।

About The Author