Rajganj: ২২.৪৬ লক্ষ টাকা উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩ সরকারি কর্মী (সূত্র)

ফের টাকার পাহাড় উদ্ধার! এবার বাড়িতে নয়, গাড়িতে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি জাতীয় সড়কে নাকা তল্লাশি চলাকালীন একটি ছোট চার চাকা গাড়ি থেকে ২২ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার খান্ডাবাহালে উমেশ গণপত এবং রাজগঞ্জ থানার আইসি পঙ্কজ সরকার জানিয়েছেন, সোমবার রাতে রাজগঞ্জের হাতিমোড়ে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি জাতীয় সড়কে নাকা তল্লাশির সময় জলপাইগুড়িমুখী একটি ইনোভা গাড়ি আটকায় পুলিশ। গাড়ির পেছন থেকে ২২ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি ব্যাকপ্যাকে বিপুল পরিমাণ টাকা রাখা ছিল। এই ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ধৃতদের জলপাইগুড়ি আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেই গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা কিভাবে এল? কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই সংক্রান্ত সদুত্তর না মেলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। ধৃতরা হলেন দার্জিলিংয়ের গুঞ্জন রাই (৩৩), জলপাইগুড়ির ধনেশ্বর বর্মন (৪৮), কোচবিহারের ভূপেন বর্মন (৪২), ময়নাগুড়ির প্রহ্লাদ বর্মন (৩৪) এবং ময়নাগুড়ির কমল রায় (৩০)।

অন্যদিকে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ জনের মধ্যে ৩ জন সরকারি কর্মী। এমনটা জানিয়েছে জলপাইগুড়ি আদালতের আইনজীবী সন্দিপ দত্ত। তাদের মধ্যে দু’জন, গুঞ্জন রাই এবং ভুপেন বর্মণ সরকারি কর্মী বলে খবর। রাজগঞ্জ থানার সামনে একটি সরকারি ধান বিক্রয় কেন্দ্রে তাঁরা কাজ করতেন বলে দাবি স্থানীয়দের। গতকাল সন্ধ্যায় সেখানে অভিযান চালিয়ে টাকা সমেত ওই দুই কর্মী এবং কেন্দ্রের ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গুঞ্জন। যদিও বিষয়টি নিশ্চিত করেননি রাজগঞ্জ থানার আইসি পঙ্কজ সরকার। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে সরকারি কেন্দ্রটি তালা বন্ধ থাকায় ধন্ধ তৈরি হয়।

রাজগঞ্জে সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে পুলিশের অভিযান নিয়ে গুঞ্জন

রাজগঞ্জে ধান ক্রয় কেন্দ্রে আচমকা পুলিশের হানা। স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধ্যায় রাজগঞ্জ বাজার লাগোয়া গরুহাটিতে ওই কেন্দ্রে অভিযান চালায় পুলিশ। এই ঘটনায় দুই আধিকারিক সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিপুল পরিমাণ টাকাও উদ্ধার করা হয় বলে দাবি। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই এই নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়েছে। তবে এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে রাজগঞ্জ থানার পুলিশ।

এদিকে কাকতালীয়ভাবে, ঘটনার পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওই কেন্দ্রের বাইরে তালা লাগানো। সরকারিভাবে কোনও ছুটির দিন না হলেও কেন এদিন সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রটি তালা বন্ধ রইল, সেই ব্যাপারে কোনও উত্তর দিতে পারেনি প্রশাসন। আরও অবাক করা ব্যাপার, টাকা উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া গুঞ্জন রাই এবং ভূপেন বর্মন ওই কেন্দ্রের কর্মী বলে খবর। বিজেপির অভিযোগ, টাকা উদ্ধারের ঘটনায় ওই আধিকারিকের নাম এল কিভাবে? রাজগঞ্জে ওই ধান বিক্রয় কেন্দ্রের দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রশাসন। সরকারি টাকা লুট করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ ওই কেন্দ্রে অভিযান চালায়। তবে ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে কোনও খবর মেলেনি। এদিকে পুলিশের পাল্টা দাবি, জাতীয় সড়কে নাকা তল্লাশি চলাকালীন একটি গাড়ি থেকে ২২ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেখানে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে দু’জন ওই সরকারি কেন্দ্রের কর্মী। এমন কাকতালীয় ঘটনার পর জল্পনা আরও বেড়েছে।

এই বিষয়ে রাজগঞ্জ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অরিন্দম ব্যানার্জি বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। ওই সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। সেইমত গতসন্ধ্যায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। সেখান থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও শুনেছি। আমাদের সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই পুলিশের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।’ যদিও বেলা বাড়লেও পুলিশের পক্ষ থেকে এমন কোনও কথাই শোনা যায়নি।

এদিকে নাকাতল্লাশি করে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় জলপাইগুড়ি আদালতে তোলার পর সেখানে এক আইনজীবী সন্দিপ দত্ত জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনজন সরকারি আধিকারিক রয়েছে। তবে তাঁরা কোনও দপ্তরের সেই বিষয়ে কোনও খবর নেই। তবে পাঁচজনই জামিন পেয়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় এক বছর ধরে ওই ধান বিক্রয় কেন্দ্রে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট দেখিয়ে সরকারি টাকা তোলা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এমনকি একজনের নামে পাঁচটি অ্যাকাউন্ট খুলে সব টাকা ভাগাভাগি করে তোলা হত বলেও দাবি। এই ঘটনায় ওই কেন্দ্রে কর্মরত খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের দুই কর্মী গুঞ্জন রাই এবং ভূপেন বর্মনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

যদিও এই বিষয়ে স্থানীয় অঞ্চল প্রধান রাজগঞ্জের বিডিও পঙ্কজ কোনার, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা বর্মণকে জিজ্ঞেস করলে তাদের ‘বিষয়টি জানা নেই’ বলে কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে প্রশ্ন উঠছে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের তালিকায় কিভাবে দুই সরকারি আধিকারিকের নাম ঢুকল। তাহলে কি সরকারি টাকা নিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার সময় পুলিশ গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার করেছে? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোন রহস্য। এই প্রসঙ্গে বিজেপির অভিযোগ, সরকারি দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। বিজেপির ব্লক সভাপতি নিতাই মন্ডল বলেন, থানার সামনেই দীর্ঘদিন ধরে এই দুর্নীতি চলছিল। পুলিশে অভিযানে বিষয়টি সামনে আসতেই সরকার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

About The Author