মালদা: সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কিশোর বয়সেই মুম্বাই পাড়ি জমিয়েছিল মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার মনোহরপুর গ্রামের বছর ১৫ এর কিশোর পীযূষ দাস। মুম্বাইতে পাইপ লাইনের কাজ করত সে। লকডাউন এ কাজ হারিয়ে অনাহারে দিন কাটছিল মুম্বাইতে। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন পেয়ে গত সপ্তাহে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ ট্রেনে জোটেনি পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জল। তার ফলে ট্রেন এ অসুস্থ হয়ে যায় কিশোর। তিনদিন অর্ধাহারে ট্রেন সফরের পর হরিশ্চন্দ্রপুর এ এসেই বারদুয়ারী হাইস্কুলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে চলে যায়। সেখানেই রবিবার রাতে গুরুতর অসুস্থ হয় সেই কিশোর। সেখান থেকে তাকে স্থানীয় মশালদা হাসপাতাল ও পরে মালদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সোমবার রাতে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। কিশোর শ্রমিক পীযূষ দাস এর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ছোট বয়সে বইপত্র ফেলে সংসার সামলাতে হাতুড়ি ধরতে হয়েছিল রোজগারের আশায়। মৃত্যুর দায় কে নেবে এখন এই প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসী থেকে আত্মীয়-পরিজন। পীযূষ দাস এর মামা গাবলু দাস জানালেন, “গত ছয় মাস আগে সে মুম্বাইতে গিয়েছিল। লকডাউন এর মধ্যে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছিল। তাই ওকে বাড়ি আসার জন্য পরিবার থেকে বলা হয়। গত সপ্তাহের ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরার জন্য। অনাহারে এই কদিন ট্রেন যাত্রার পর বারদুয়ারী কোয়ারেন্টিন সেন্টারে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই প্রথমে মশালদা হাসপাতাল, তারপরে তাকে মালদা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। গতকাল রাত্রে মৃত্যু হয়েছে ছেলেটির। ওর বাবা দিল্লিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। আমরা চাই এই মুহূর্তে প্রশাসন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াক।”
পীযূষ দাস এর কাকা বচ্চন দাস জানালেন, “গতকাল রাত্রে মালদা মেডিকেল কলেজে আমার ভাইপো মারা গেছে। শুনেছি ওর লালা রস নেওয়া হয়েছে পোস্টমর্টেম ও হবে। আমরা চাই ওর দেহ আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। আমরা যেন ওর শেষকৃত্য করতে পারি এই গ্রামে নিয়ে এসে।সংসারের হাল ধরতে ছোট বয়সে শ্রমিকের কাজ করতে সুদূর মুম্বাই চলে গিয়েছিল। লক ডাউন এর মধ্যে যে তার মরদেহ বাড়ি ফিরবে আমরা তা ভাবতে পারেনি।”
স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় দাস জানালেন, “আমরা শুনেছি ছেলেটি ট্রেনে খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো না হওয়ায় অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। তারপর এখানে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পরে সেখানে অসুস্থতা বেড়ে যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা। আজকে জানতে পারলাম মালদা মেডিকেল কলেজের সে মারা গিয়েছে। আমরা চাই প্রশাসন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াক”
জেলা পরিষদ এর শিশু নারী ও ত্রাণ কর্মাদক্ষ মর্জিনা খাতুন জানান, “বাইরে থেকে যারা বাংলায় ফিরছেন তাদের ব্যাপারে কেন্দ্র সরকারের আরও গুরুত্ব নেওয়া উচিত। রেল দপ্তরের এদের খাবার দাবারের ব্যাপারে আরও সচেতন থাকা উচিত ছিল। আজ কেন্দ্র সরকারের উদাসীনতার জন্যই এত শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে। এর দায় কেন্দ্রকে নিতে হবে। আমি স্থানীয় প্রশাসন পক্ষ থেকে এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়াবো। আগামীতে আরো কিছু আর্থিক সাহায্য করা যায় কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।”
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লকের ব্লক মেডিকেল অফিসার সাগর বসাককে ফোনে ধরা হলে তিনি জানান, “গতকাল সকালেই পীযূষ দাস অসুস্থ অবস্থায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে এসেছিল। আমরা খবর পেয়ে তাকে প্রথমে মশালদা হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখান থেকে অবস্থা খারাপ হলে মালদা মেডিকেল স্থানান্তর করা হয়। গতকাল রাত্রে সেখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। এভাবে ১৫ বছরের কিশোর অকালে চলে যাওয়াটা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। ওই ছেলেটি লালা রস সংগ্রহ হয়েছে।”