জলপাইগুড়ি: নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে দাঁড়ানোর প্রবল আশা দেখছিলেন রাজগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের অন্যতম পরিচিত মুখ কৃষ্ণ দাস। কিন্তু প্রার্থীপদ না পেয়ে প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করে বর্তমান বিধায়ক তথা আগামী নির্বাচনের জন্য পুনরায় তৃণমূলের প্রার্থী খগেশ্বর রায়ের বিরুদ্ধে বোমা ফাটান তিনি। অন্তরের ক্ষোভ বেরিয়ে পড়ে গত শুক্রবার।
প্রথমে নির্দল হয়ে ভোটে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত এবং পরে আবারও তৃণমূলে ফেরত আসা। এছাড়াও বিধায়ক প্রসঙ্গে কৃষ্ণ দাসের মন্তব্য; এইসব নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি রাজগঞ্জের বিরোধীমহল। স্থানীয় বিজেপি নেতা নিতাই মন্ডল জানান, যিনি কদিন আগেও বিধায়কের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন, তিনি আবার তারই হয়ে ভোটের প্রচারে নামবেন। বিষয়টি একরকম অসম্ভব মনে হচ্ছে। এর পাশাপাশি কৃষ্ণ দাসকে নিজের স্বার্থের জন্য দলে ফেরত আসার সম্ভাবনাও দেখিয়েছেন ওই বিজেপি নেতা। রাজগঞ্জের বাম নেতা সৌকত আলি জানান, তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমরা কি অভিযোগ করব? তৃণমূলের অপসংস্কৃতি তাদের দলেরই একজন প্রকাশ করেছেন। বিরোধীমহলের তরফ থেকে একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে; সাধারণ মানুষ কি এত বোকা? তারা কী এই বিষয়টি বুঝতে পেরেও তৃণমূলকে ভোট দেবে? যদিও কৃষ্ণদাস একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে দলকে জেতানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। অন্যদিকে বিরোধী মহলের প্রশ্ন, যেখানে তৃণমূলের একে অপরকে উলঙ্গ করছেন সেখানে সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই তৃণমূলের দিকে পা বাড়াবেন না।
নির্দল হয়ে দাড়ানোর কথা জানিয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন কৃষ্ণ দাস। তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘বিধায়ক মাতাল; তিনি বধূ নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।’ এর পাশাপাশি জমি মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত। তিন বছরের বিধায়ক সময়কালে সেরকম কোনও কাজ করতে পারেননি। ঘরে ঘরে জব কার্ড দিতে পারেননি। কর্মসংস্থান করতে ব্যর্থ। এরকম নানান অভিযোগ তুলে একজন ‘অযোগ্য’ বিধায়ক হিসেবে ব্যাখ্যা প্রদান করেন কৃষ্ণ দাস। এর পাশাপাশি রাজবংশী সমাজের জন্যও একজন ‘খারাপ লোক’ বলে মন্তব্য করেন কৃষ্ণবাবু। যদিও দলের প্রতি তার কোনও ক্ষোভ ছিলনা বলেই জানান তিনি। তবে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে একজন ‘অযোগ্য’ ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে দেখে তিনি দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাই তিনি নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। যদিও এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই অন্য দলে যোগদানের বিষয়ে জল্পনা প্রবল হয়। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার অনুগামীদের মধ্যেও। গত ৯ মার্চ রাজগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন দাদার অনুগামীরা। পোড়ানো হয় বিধায়কের কুশপুতুলও।
তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর দলের হয়েই নির্বাচনের কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। তবে বিধায়কের বিরুদ্ধে ‘মদ্যপ’, ‘বধূ নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত’ এই সমস্ত অভিযোগ ফেরত নিতে নারাজ তৃণমূলের কৃষ্ণ দাস। নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী যে তার একেবারেই না-পসন্দ সে বিষয়ে স্পষ্ট আভাস দিচ্ছেন তিনি। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিধায়কের বিরুদ্ধে করা আপনার অভিযোগ কি পাল্টাবেন? উত্তরে কৃষ্ণদাস বলেন, বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা বা পাল্টানো র ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করার দরকার নেই। তিনি কি করেন তা সবাই টিভি চ্যানেল, বিভিন্ন মাধ্যম এবং সংবাদপত্র-পত্রিকায় দেখেছেন বা পড়েছেন। শুধুমাত্র তৃণমূলের প্রতীককে সমর্থন জানিয়ে দলকে জেতানোর লক্ষ্যেই তিনি কাজ করবেন। অর্থাৎ প্রার্থী হিসেবে বিধায়ক খগেশ্বর রায় যে তাঁর না-পসন্দ, সেটাই বুঝিয়ে দিলেন তিনি।