জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতালে ফের রোগী উধাওয়ের ঘটনা! ২৪ ঘণ্টা পর মিলল হদিস

জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতাল থেকে ফের নিখোঁজ হলেন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। রাজগঞ্জ ঠাকুরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা অপ্রতিম ঝাঁ গত সাত দিন ধরে করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। সোমবার তাকে জলপাইগুড়ি বিশ্ববাংলা কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই রাতেই পরিবারের লোকেরা খবর পান তিনি হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছেন। এই খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যেরা। অবশেষে পরদিন বিকেলে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর শহর থেকেই তাকে উদ্ধার করেন আত্মীয়রা পরিজনেরা।

জানা গিয়েছে, গত ১৭ তারিখ স্ত্রী ও মেয়েসহ অপ্রতিম বাবু নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজগঞ্জের সেফ হোমে যান। অপ্রতিম বাবুর স্ত্রী সুদিপ্তা ঝাঁ জানান, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরই তার মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। মানসিক অস্থিরতাও লক্ষ করা যায়। সেফ হোম থেকে ছাড়া পাওয়ার দু’দিন আগে এই অস্থিরতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছিল। উত্তেজিত হলেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আপনমনেই আলোচনা করতেন। পরে গত সোমবার স্ত্রী ও মেয়ে করোনা নেগেটিভ হলে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে বলা হয়। কিন্তু অপ্রতিম বাবুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে বিশ্ববাংলা কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জলপাইগুড়ি করোনা হাসপাতালে আনা হয় তাকে। এদিন রাত্রি ন’টা নাগাদ পরিবারের লোকেরা খবর পান তিনি বিশ্ববাংলা কোভিদ হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন।

জলপাইগুড়ি থেকে ওই ব্যক্তির এক আত্মীয় জানান, সোমবার হাসপাতালে বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ অপ্রতিম বাবু বেপাত্তা হয়ে যান বলে খবরে জানান হয়। রাত ন’টা নাগাদ পরিবারকে খবর দেওয়া হয় হাসপাতালের তরফে। একেতো করোনা আক্রান্ত পরিবার, তার ওপর পরিবারের একজন নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার খবরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন বাড়ির লোকেরা।

মঙ্গলবার সকালে অপ্রতিমবাবুর স্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিষয়টি জানান। স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার খবরে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এদিকে বাড়িতে তার মাও কিছুক্ষণ পরপরই কেঁদে উঠছেন। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হতেই কয়েক ঘণ্টা পরই খবর মেলে জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গায় তাকে খালি গায়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল। পরে এদিন বিকেলে সাড়ে ৪টা নাগাদ জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমের সামনে থেকে ওনাকে উদ্ধার করেন তার বন্ধু এবং পরিবারের লোকজনেরা।

করোনা হাসপাতাল থেকে কিভাবে একজন রোগী নিখোঁজ হয়ে যান সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনার পর প্রায় ২৪ ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর শহর থেকেই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা গেল। অপ্রতিম বাবুর স্ত্রী বলেন, বিশ্ববাংলা কোভিড হাসপাতাল থেকে এভাবে রোগী নিখোঁজ হয়ে গেলে আমরা কোন ভরসায় একজন অসুস্থ মানুষকে সেখানে রাখতে পারব? অপ্রতিম বাবুর উদ্ধার হওয়ার খবরে তার স্ত্রী বলেন বিশ্ববাংলা কোভিড হাসপাতালে রাখতে আর ভরসা হচ্ছেনা; আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

জানা গিয়েছে এই ঘটনায় হাসপাতালের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত হাসপাতালের তরফে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগেও কয়েকবার একই ঘটনা ঘটেছে জলপাইগুড়ি বিশ্ববাংলা কোভিড হাসপাতালে। কখনও মৃতদেহ বেপাত্তা হয়ে যাচ্ছে আবার কখনও রোগী নিজেই উধাও হয়ে যাচ্ছেন। ক’দিন আগেই চালসার এক করোনা আক্রান্ত ব্যাক্তি হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে ফাটাপুকুরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে বিশ্ববাংলা হাসপাতলে রোগী নিরাপত্তা নিয়ে। পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, রাস্তায় একজন অসুস্থ ব্যক্তি ঘুরে বেড়ালে কেন প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না?

অপ্রতিম বাবুর বয়স ৪২ বছর। তিনি ছোটখাটো ব্যবসা করেন। তার স্ত্রী রাজগঞ্জ মহেন্দ্রনাথ হাই স্কুলের শিক্ষিকা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে তার বাড়িতে তার মা, দাদা ও বৌদি করোনা আক্রান্ত হন। তারপর মেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে নিজেও করোনা পরীক্ষা করলে রিপোর্ট পজেটিভ ধরা পড়ে। এরপর ১৭ মে তাদের রাজগঞ্জের সেফ হোমে পাঠানো হয়। গত সোমবার সেখান থেকে ছাড়া পান তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে। কিন্তু অপ্রতিম বাবুর অসুস্থতার কারণে তাকে বিশ্ববাংলা কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার স্ত্রী এও বলেন, অপ্রতিম বাবু এর আগে কোনওদিন এরকম ব্যবহার করেননি। সম্ভবত করোনা আতঙ্কে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। পরিবার এক হলেও সেফ হোমে থাকার জায়গা আলাদা হওয়ায় সম্ভবত নিজের খেয়াল রাখতে পারেননি। এ কারণেই হয়ত এমনটা হয়ে থাকতে পারে। এমনটাই অনুমান অপ্রতিম ঝাঁয়ের স্ত্রীর।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওই ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার দিনই একই সময়ে ফাটাপুকুরের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী ধ্রুব রায়ের মৃত্যুর খবর মিলেছিল। প্রয়াত ধ্রুব রায়েরও বয়স ছিল চল্লিশের ঘরেই। স্বাভাবিকভাবেই পরপর জোড়া ঘটনায় রাজগঞ্জে যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।