জলপাইগুড়ি: আর পাঁচটা গৃহবধূর মতই বাড়ির সব কাজ সামলেও সমাজসেবামূলক কাজে ব্রতী হয়েছেন রাজগঞ্জের এই মহিলা। অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসাজনিত সাহায্য করাই যেন তার জীবনের আরেকটি দিক। বিগত দুই দশক ধরে রাজগঞ্জ ব্লক এবং সংলগ্ন এলাকার অসহায় মানুষগুলির চিকিৎসার ব্যাপারে সাহায্য করেছেন তিনি। ইনি হলেন রজনী মেনন। নানারকম সমাজসেবামূলক কাজ করেন তিনি। তাঁর সামাজিক কাজকর্মের জন্য বহু সম্মানও পেয়েছেন। ক’দিন আগেই এশিয়ান প্রাইড অ্যাওয়ার্ড দিয়ে বিশেষ সম্মান জানিয়েছে দেশের আরও একটি সংস্থা।
জলপাইগুড়িতে রাজগঞ্জের মালিভিটা অঞ্চলে রজনী মেননের বাড়ি। তাঁর পরিবারে রয়েছেন মোট ৬ জন। দুই মেয়ে, ১ ছেলে, শাশুড়ি মা এবং স্বামীকে নিয়ে তাঁর ঘর-সংসার। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামী রোশন মেনন, দুরারোগ্য ব্যধি, রিউমেটিক আর্থরাইটিস [একটি প্রগ্রেসিভ অটো-ইমিউন ডিজিজ]-এ আক্রান্ত। এই রোগের নিরাময় সম্ভব নয়। আজীবন নজরে নজরে রাখতে হবে তাঁকে। স্বামীর চিকিৎসার জন্য দেশের বড় বড় হাসপাতালে ঘুরে বেরিয়েছেন রজনী মেনন। সাক্ষাৎ হয়েছে বহু নামকরা মানুষের সঙ্গে। স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এলাকার অসহায় মানুষগুলির চিকিৎসাজনিত অভাবের কথা তাঁর মাথায় আসে।
রজনী মেনন বলেন, অসহায়কে সাহায্য করাটা প্রচারের বিষয়বস্তু নয়। তিনি নিজে থেকে কাউকে ডেকে সাহায্য করেন না; দরকারের সময় অনেক অসহায় মানুষ তার কাছে সাহায্যের আবেদন নিয়ে আসেন। সেসময় তিনি তার সাধ্যমত চেষ্টা করেন মাত্র। এই ধরনের সমাজসেবামূলক কাজের জন্য বহু সম্মান পেয়েছেন রজনী দেবী। ক’দিন আগে ভূপাল থেকে পেয়েছেন এশিয়ান প্রাইড অ্যায়ার্ড নামের বিশেষ সম্মাননা। রজনীদেবীর বিশেষ সম্মান প্রাপ্তির খবর শুনে দেখা করতে আসেন জলপাইগুড়ি জেলার সাংসদ ড: জয়ন্ত কুমার রায়। তিনি জানান, রাজগঞ্জের মূল জনপদ থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন এলাকায় এক নারীর সমাজসেবামূলক কাজ এবং তার প্রাপ্তি হিসেবে এই সম্মান, সত্যিই গর্বের বিষয়। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির একজন সদস্যও বটে।
শাশুড়ি বাসন্তী মেনন ১৯৬৮ সাল থেকে মালিভিটার গ্রামীণ হাসপাতালে সেবিকার কাজ করে এসেছেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। তবে এখনও পাড়ার সকলেই তাঁকে নার্স দিদি অথবা পিসি বলেই চেনে। শ্বশুরমশায় প্রয়াত আনন্দ মেনন সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। মেনন পরিবারের গৃহবধূ রজনী মেনন সমাজসেবামূলক কাজে আগে থেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন। চা-বাগানের বহু পুরোনো ব্যবসা রোজকার চাহিদা পূরণের মূল উৎস। তিনি আগে থেকেই বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ছোট্ট পরিবারের সাজানো-গোছানো বাড়িতে ৬টি মানুষ ছাড়াও রয়েছে গরু-ছাগল-মুরগী। পরিবার ও বাড়ির কাজ সেরে অবলা প্রাণীগুলির ওপরেও বিশেষ যত্ন নেন রজনীদেবী। পাশাপাশি বাগান করার শখও রয়েছে।
সম্মানের সার্টিফিকেট অথবা স্মারক পাওয়াটা বড় কথা নয়। একটি স্বচ্ছল পরিবারে থেকেও অসহায় মানুষগুলির কথা চিন্তা করে তাদের জন্য কিছু করার ভাবনাটাই হল বড় কথা। পাশাপাশি এলাকার সাহায্যপ্রাপ্ত মানুষেরাও রজনীর পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সব সময়। নিজের পুত্রবধূ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বসন্তি মেনন জানান, পুত্রবধুর সম্মান প্রাপ্তি তার জন্য গর্বের বিষয়। তিনি ও তার কাজে সব সময় উৎসাহ দেন। তিনি আরও বলেন, ১৯৬৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল সময়কাল পর্যন্ত মালিভিটা গ্রামীণ হাসপাতালে নার্সের কাজ করেছেন। দীর্ঘ কয়েক দশকে উন্নত পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। এলাকায় ন্যূনতম ব্যবস্থা থাকলে গরীব অসহায় মানুষগুলি চিকিৎসাজনিত সুবিধা পেতে সহজ হয়। তা না হলে দৌড়ে দৌড়ে সুদূর উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ না হলে কলকাতায় নিয়ে যেতে হয়। যা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। সম্মান পেয়ে কাজের উৎসাহ যেন আরও বেড়ে গেল, হাসিমুখে জানালেন রজনীদেবী।