জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষা? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে ছাত্রছাত্রীরা

শিলিগুড়িঃ  উত্তরবঙ্গে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। আজই গোটা উত্তরবঙ্গে সংক্রমিত ৬৪ জন। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের আগত পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (I+I+I) তৃতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই পরীক্ষা নেওয়া হবে, কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কলেজে গিয়ে পরীক্ষায় বসতে নারাজ ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরা মনে করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া অসম্ভব। এ বিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় “এনবিইউ এগেইন্সট এক্সাম” নামের একটি গ্রুপও তৈরি করেছে ছাত্রছাত্রীরা যার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি।

ছাত্রছাত্রীদের মতে, বর্তমান করোনায় বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এর কর্তৃপক্ষগণ পরীক্ষা নেওয়ার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন এবং প্রশ্নপত্রের ধাচ বদলানোর যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, সকল ছাত্রছাত্রীগণ সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এবং পরীক্ষা দেওয়ার কর্মসূচিতে একমত নয়। বর্তমানে গোটা দেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষের কাছাকাছি, প্রতিদিন অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা যা গড়ে ছয় হাজার এবং রাজ্যেও ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা গ্রহণের এই চিন্তা ভাবনা ছাত্রছাত্রীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছে। ছাত্রছাত্রীরা চিন্তিত, তাঁরা পড়াশোনা করবে নাকি নিজের সুরক্ষা নিয়ে ভাববে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশ যারা ভাড়া বাড়ি, হোস্টেল, মেসে ছিল তাঁরা প্রায় সবাই নিজের নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছে। সুতরাং এই মুহূর্তে পরীক্ষার প্রাক্কালে লকডাউন শিথিল হলেও কিভাবে ভাড়াবাড়ি গুলোতে থাকার নিশ্চয়তা পেতে পারে। যেখানে এখন অন্য জেলা বা অন্য এলাকা থেকে ফিরলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় এমন ঘটনাও চোখে আসছে যে অন্য স্থান থেকে ফেরায় পাড়াতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা অনেককে। যারা দূর দূরান্তে থাকে তাঁদের পরীক্ষা চলাকালীন যাতায়াত করতে হবে গনপরিবহনের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে সোশ্যাল ডিসটেন্স কতটা পালন হবে এটাও ভাবনার বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে জুন-জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্রাধিক পরিমানে বৃদ্ধি পেতে পারে, সেক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের সুরক্ষার দিকটাও ভাবা দরকার বলে তাঁদের বক্তব্য। তাঁদের কথায়, ইউজিসি এর অধীনে থাকা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের স্টুডেন্টদের সবারই দাবি পরীক্ষা বাতিল বা প্রমোট করে দেওয়া সেক্ষত্রে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দাবিটাও একই এবং এখানে ফাঁকি দেওয়ার কোনো ব্যাপার নেই বা প্রশ্নই ওঠে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়ার পরিবেশ বেশ প্রতিকূল এবং এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রক্রিয়াতেও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। অতএব তাঁদের দাবি পূর্ব দুবছরের গড় নম্বর দেখে নম্বর দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে প্রসন্নদেব মহিলা মহাবিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মনস্বিতা ভট্টাচার্য্য জানান, “আমরা কোনোমতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে রাজি নই। ছাত্রছাত্রীরা দূর দুরান্ত থেকে বাসে, ট্রেনে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসবে। যদি একজন ছাত্রছাত্রীও আক্রান্ত হয় তাঁর দায়িত্ব সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে কি? আমরা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এবং গৌরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা একসাথে প্রতিবাদে নেমেছি। কর্তৃপক্ষ ও অনেকে বলছে স্টুডেন্টরা পড়াশোনা করেনা তাই পরীক্ষা এড়াতে চাইছে। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েই এই জায়গায় এসেছি। পরীক্ষাকে ভয় পাইনা আমরা। আমাদের ভয় আমাদেরও পরিবার আছে। বাবা মা আছে। আমাদের কিছু হলে কেউ দায়িত্ব নেবেনা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার বিকল্প ব্যবস্থার কথা চিন্তা করুক। যেমন অ্যাসাইনমেন্ট বা বিগত দু বছরের গড় নম্বর মূল্যায়ন করে একটি নম্বর দিয়ে উত্তীর্ণ করানো।”

এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সমস্যায় পড়েছে। ইউজিসির নিয়ম অনুসারে আগস্টের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাও সময়মত না নিলে বিপদ বাড়বে। পরীক্ষা না নিয়ে পাশ করানোর ব্যাপারেও রয়েছে সমস্যা। ইতিমধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অনেক ই মেল জমা পড়েছে গ্রিভান্স সেলে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক দেবাশিস দত্ত বলেন, “গ্রিভান্স সেলে অনেক আবেদন এসেছে, কি হবে, এখনও জানি না”।

উল্লেখ্য, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের বিষয় নিজেরাই দেখবে। এখন দেখার শেষপর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি সিদ্ধান্ত নেয়।