তাওয়াংয়ের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে শোরগোল পরে গিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এরমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে একটি ‘পুরনো’ ভিডিও, যেখানে চিনা বাহিনীকে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ডাণ্ডা দিয়ে পিটুনি দিতে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় সেনা জওয়ানদের। ৯ তারিখ সকালে তাওয়াংয়ের সংঘর্ষের ভিডিও বলে দাবি করে ঝড়ের গতিতে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে সেটি।
বুধবার জানা গেল, ভিডিওটি আদৌ ৯ তারিখের নয়। বলা হচ্ছে, এই সময়ে ভারত-চিন সীমান্তের ওই এলাকা বরফে ঢাকা থাকার কথা। তবে ভিডিওতে সেরকম কিছু দেখা যাচ্ছে না। এছাড়াও ঘটনার সময়, ভোররাত ৩টা। ভিডিওতে দিনের আলো রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ভিডিওটি সম্ভবত গত বছরের গালওয়ানের ভিডিও। এই পরিস্থিতিতে পুরনো ভিডিও নতুন করে সামনে এসেছে। তারই সত্যতা যাচাই না করে হুড়মুড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর পরেই মুখ খুলেছে সেনা। তাঁরা জানিয়েছে, এই ভিডিওর সঙ্গে ৯ ডিসেম্বরের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি লাদাখের গালওয়ানের ভিডিও বলেই জানানো হয়েছে।
অনেকেই দাবি করেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সাম্প্রতিক তাওয়াং সংঘর্ষের নয়। এই ভিডিওটি পুরনো। ভারত-চিন সংঘর্ষের ২০২১ সালের ভিডিয়ো এটি। আবার কারও দাবি, ২০২০ সালের মে মাসের ভিডিও এটি। আসলে লাদাখ সীমান্তের পাশাপাশি অরুণাচল সীমান্তেও বারংবার চিনা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। কারণ, চিন কখননই অরুণাচলকে ভারতের অংশ বলে মানতে চায় না।
প্রসঙ্গত, ৯ ডিসেম্বর অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় চিনের সেনা। পরবর্তী হামলার আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে স্থলসেনা, নৌসেনা ও বায়ুসেনার প্রধানেরা বৈঠক করে দুপুর ১২টার সময় লোকসভায় এই নিয়ে বিবৃতি পেশ করেন। রাজনাথ সিং সংসদে জানান, ১১ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনার সঙ্গে চিনা পিএলএ-র ফ্ল্যাগ বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে তাওয়াং সংঘর্ষ নিয়ে দুই দেশের সেনার আলোচনা হয়। ভারতের তরফে সেই বৈঠকে চিনকে কড়া ভাষায় বলা হয় যাতে এই ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ যেন আর না নেওয়া হয়।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর অরুণাচলপ্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে সংঘাতে জড়ায় ভারতীয় ও চিনা সেনা। প্রায় ৩০০ সৈন্যকে নিয়ে তাওয়াঙের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে এসেছিল চিন। চিনা আগ্রাসনের কড়া জবাব দেয় ভারতীয় সেনা। এই সংঘাতের জেরে কয়েকজন ভারতীয় সেনা এবং চিনা সেনার কয়েকজন আহত হয়েছেন। ভারতের তুলনায় চিনের বাহিনীতে আহতের সংখ্যা অনেক বেশি। এই ব্যাপারে মঙ্গলবার সংসদে বক্তব্য পেশ করেন রাজনাথ সিংহ। তারপর দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, ‘মোদি সরকারের আমলে ভারতের এক ইঞ্চি জমিও কেউ দখল করতে পারবে না।’ সেই সঙ্গে কংগ্রেসকেও এই ব্যাপারে খোঁচা দেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-চিন সীমান্ত লঙ্ঘনের চেষ্টা করছে চিন। ইতিমধ্যেই ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের বেশকিছু এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চিনের সরকার। গালওয়ানের ঘটনার পর এবার অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে সীমান্ত লঙ্ঘনের চেষ্টা করে চিনের সেনা। যদিও ভারতীয় সেনার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে অচিরেই চিনাদের থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।