জলপাইগুড়ি: রাজগঞ্জ ব্লকের শিকারপুরে ঐতিহ্যবাহী দেবী চৌধুরানী মন্দির নির্মাণের কাজ কার্যত থমকে রয়েছে; অভিযোগ স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের। এই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যেও। ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ন’টা নাগাদ রহস্যজনকভাবেপুড়ে গিয়েছিল মন্দিরটি। অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে সকাল সকাল হাজির হয়ে মন্দির পুনর্নির্মানের আশ্বাস দেন মন্ত্রী গৌতম দেব। এই ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে পনেরো দিনের মধ্যেই স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তিতে বন্ধ হয়ে যায় সেই কাজ। ‘দায়সারা’ ভাবে মন্দির পুনর্নির্মাণ করতে দেবেন না বলে আপত্তি তোলেন তারা। এরপর ১৪ অগাস্ট, কাজ পরিদর্শনে যান রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়। চারদিন পর অর্থাৎ ১৮ অগাস্ট মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করতে আসেন মন্ত্রী গৌতম দেব। কথা মোতাবেক শুরু হয় মন্দির তৈরীর কাজ। পর্যটন দপ্তর থেকে মন্দির তৈরি করবার জন্য প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ করা হয় প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকা। ১৯ অগাস্ট মন্দিরের পুড়ে যাওয়া ধংসাবশেষ জলপাইগুড়ি জেলা শাসকের ট্রেজারিতে জমা দেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় ও মন্দিরের কাজের ভাস্কর্য শিল্পী বিশ্বজিৎ ঘোষ। কথা দেওয়া হয়, কালিপুজোর আগেই মন্দিরের বেশিরভাগটাই তৈরি করা হবে। তারপরও একাধিকবার কাজে গড়িমসি হয়েছে বলে অভিযোগ। গুণমান নিয়েও একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে। কদিন পরই ৫ সেপ্টেম্বর, মন্দির পরিদর্শনে আসেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব রথীন বোস ও রাজ্য কিষাণ মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অরুন মণ্ডল। তাঁরও আগে ৮ এপ্রিল ভোটের মুখে পুজো দিতে এসেছিলেন সেসময়ের ভাবী সাংসদ জয়ন্ত রায়। তাদের তরফে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে, মন্দির নির্মাণের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। এরপরেও কেটে গিয়েছে একটা বছর। একদিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী উত্তরকন্যায় আসলেন, অন্যদিকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা রাজগঞ্জ উত্তর মন্ডল বিজেপির সহ সভাপতি তপন রায় অভিযোগ করে জানান, মন্দির নির্মাণের শুভ উদ্বোধন হতে না হতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কলকাতায় ঘোষণা করেছিলেন রাজগঞ্জের দেবী চৌধুরানীর মন্দির সম্পূর্ন তৈরি হয়েছে। একথা যে সম্পূর্ণ মিথ্যে তা বর্তমান পরিস্থিতি চোখে দেখলেই প্রমাণ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু না হলে, স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করবেন তাঁরা। এ বিষয়ে রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, মন্দিরের কাজ নিয়ম মতোই এগোচ্ছে। যদিও লকডাউন এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে; একথা স্বীকার করে নিয়েছেন বিধায়ক। তিনি আরও জানান মন্দিরের বিগ্রহ নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। যদিও এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে বিরোধীদের। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা তপন রায়ের আরও অভিযোগ, মন্দিরের বদলে মসজিদ বানানো হলে এতদিনে হয়ত কাজ শেষ হয়ে যেত। এ প্রসঙ্গে বিধায়ক বলেন, ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদের সুড়সুড়ি বিজেপি বরাবরই দিয়ে থাকে। এসব কথা ভিত্তিহীন। বিজেপির চাঁদা সংগ্রহ প্রসঙ্গে বিধায়ক সাংসদের নাম উল্লেখ করে বলেন, জয়ন্তবাবু ৫ কোটি টাকা পেয়েছেন, চাঁদা না তুলে তিনিই টাকা দিন মন্দির নির্মাণের জন্য। জয়ন্তবাবুর কথায়, তাঁর লোকসভা এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তিনি এই টাকা পেয়েছেন, ব্যক্তিগত খরচের জন্য নয়। তবে দেবী চৌধুরানী মন্দির নির্মাণ কাজে প্রয়োজন হলে তিনি সাহায্য করবেন। এনিয়ে বিজেপির আন্দোলন হলে তাঁর সমর্থন থাকবে বলে জানান সাংসদ।