রাজগঞ্জে দলীয় কর্মসূচীতে এসে একরকম নেতৃত্বই দিলেন শঙ্কর ঘোষ। তাঁকে ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে এলাকার বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ ছুঁড়ল ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের কথায়, এলাকায় বিজেপি নেতাদের অভাব। তা নাহলে একটি সাধারণ কর্মসূচী সারতেও বাইরে থেকে নেতা নিয়ে আসতে হয়। আগামী ৫ অগাস্ট তাঁর বাড়ির সামনে অবস্থানে বসতে যেতে হবে কি আমাদের? ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিয়ে রাজগঞ্জে বিজেপির কর্মসূচীর ওপর নজর রেখেছিলেন ব্লকের তৃণমূল নেতারা। জানালেন প্রতিক্রিয়া।
কলকাতা: শুক্রবার রাজগঞ্জে বিজেপির বিডিও অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে ‘মধ্যমণি’ হয়ে রইলেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ। শাসক দলের সঙ্গে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গতের অভিযোগ এবং ভোট-ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদে একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্য সামনে আনলেন তিনি। সেই নিয়ে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, রাজগঞ্জে বিজেপি নেতাদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে সেই কারণেই বাইরে থেকে ‘বড় নেতা’কে আমদানি করতে হল। অভিষেকের ৫ অগাস্টের কর্মসূচী নিয়ে ব্লক তৃণমূল জানাল, এলাকায় সেরকম বড় বিজেপি নেতা বোধয় নেই, তাই রাজগঞ্জে শঙ্কর ঘোষকে ছুটে আসতে হল। আগামী ৫ অগাস্ট তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসতে হবে কি আমাদের? যদিও তৃণমূলের এমন ‘কটাক্ষ’ নিয়ে নিস্পৃহ বিজেপি। তাঁদের দাবি, সবাই সব দেখছে।
একুশে জুলাই, শুক্রবার। একদিকে যখন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বসহ রাজ্যের অধিকাংশ তৃণমূল নেতা কর্মী ধর্মতলায় জড়ো হলেন, অন্যদিকে জেলায় জেলায় বিজেপির পক্ষ থেকে বিডিও অফিস ঘেরাও কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হল। অন্যান্য সব জায়গার মতো রাজগঞ্জেও বিজেপি বিডিও অফিস ঘেরাও কর্মসূচি করে রাজ্যের শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ এবং অন্যান্য কর্তাদের কথার অস্ত্রে আহত করে ছাড়লেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। এদিকে কলকাতায় বসে এলাকার খোঁজখবর রাখছিলেন ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপির অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটে শাসক নেতারা প্রশাসনের কর্তাদের হাত করে বিভিন্ন বুথে ছাপ্পা ভোট এবং সন্ত্রাস করেছেন। শুক্রবার তাই বিক্ষোভ সেরে গোলাপ ফুল নিয়ে পুলিশ কর্তাদের পেছনে কার্যত ধাওয়া করলেন তারা।
এদিকে তৃণমূলের শহীদ দিবসের মঞ্চে বসে বিজেপির কর্মসূচি দেখে হাসাহাসি করলেন রাজগঞ্জের বিধায়ক এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাদের দাবি রাজ্যজুড়ে মানুষের সমর্থন না মেলায় মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে বিজেপির। তাই সন্ত্রাস এবং ছাপ্পা ভোটের মিথ্যে অভিযোগ করছে। বিজেপির অভিযোগকে হেসে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব জানাল, সব জায়গায় সন্ত্রাস হলে রাজ্যে তৃণমূল ব্যাপকভাবে জয় পেত না। কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটলেও দেখা গিয়েছে, যেখানে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা, সেখানে বিজেপি জয় পেয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
রাজগঞ্জ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ধর্মতলায় লোকজনের যা উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে তাতে করে রাজ্যে তৃণমূলের শক্তি দেখে ভয় পেয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে রাত্রে জুড়ে চলা বিজেপির কর্মসূচি নিয়োগ বলেন রাজগঞ্জের সাহাপাড়া বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা কিন্তু দেখা গেল সেখানে জয় পেয়েছে বিজেপি তাহলে কি সেখানেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলবে বিজেপির নেতারা। এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি নেতাদের গণঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা চিন্তায় রয়েছি। রাজগঞ্জে সেরকম বিজেপি নেতা কোথায়? আজ বিডিও অফিসে শংকরবাবু এসেছিলেন। ভাবছি তাঁর বাড়ির সামনে গিয়েই আমরা অবস্থান-বিক্ষোভে বসে পড়ব।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে অশান্তি ও হিংসার ঘটনার অভিযোগ তুলে রাজ্যজুড়ে বিজেপির তরফে বিডিও অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের পাশাপাশি রাজগঞ্জেও সেই কর্মসূচি করল বিজেপি। তবে তার আগে বিডিও অফিসের একশো মিটার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। প্রশাসনের এই ১৪৪ ধারাকে উপেক্ষা করেই এদিন বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা মিছিল করে বিডিও কার্যালয়ের দিকে এগোতে থাকলে ব্যারিকেড করে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে যায় বিক্ষোভকারী। যদিও বিজেপির তরফে একটি প্রতিনিধি দল তাদের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি তুলে দেয় রাজগঞ্জের বিডিও-কে।
এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিক্ষোভ কর্মসূচীতে ছিলেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, ব্লক সভাপতি নিতাই মণ্ডল, জেলা নেতৃত্ব নকুল দাস, দিলিপ চৌধুরী প্রমুখ। কর্মসূচী শেষের দিকে বিডিও এবং পুলিশ কর্তাদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে কাউকে দিতে না পেরে গেটের সামনে গুঁজে চলে আসেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, ভোটে তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছে প্রশাসন। তাই গোলাপ দিয়ে গেলাম। হাতে নিলেন না। যদি রাতে বেরোয় তবে তারা যেন খুলে নেয়।