কুমারগঞ্জ: প্রাথমিকভাবে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পরও জায়গায় জায়গায় জনসভা এবং অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হওয়ার অভিযোগ ঊঠল কুমারগঞ্জের বিধায়ক তোরাফ হোসেন মন্ডলের বিরুদ্ধে। এই প্রথম উত্তরবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হলেন তৃণমূলের কোনও বিধায়ক। ট্রুনাট মেশিনে তাঁর লালার নমুনা পরীক্ষার পর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর। গত ২ জুলাই আবারও লালার নমুনা মালদা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। এবারও চূড়ান্ত রিপোর্টে তিনি করোনায় আক্রান্ত তার প্রমাণ মেলে।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান করোনা পরীক্ষায় তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। ২ জুলাই তারিখে করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন তোরাফ। শরীরে কোনও রকম উপসর্গ বা অসুবিধা না থাকায় জেলায় তৃণমূলের সব কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এদিন রিপোর্ট পজিটিভ জানার পরে তিনি নিজেই সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চলে যান। তাঁর দুই ছেলে ও স্ত্রীরও করোনার পরীক্ষা হয়েছে।
গত ২৫ জুন গঙ্গারামপুর মহকুমায় এক দলীয় কর্মসূচিতে যোগদান করার পরই তিনি করোনা আক্রান্ত হন বলে অনুমান। তারপর তৃণমূলের ওই সভায় যোগদানকারী দলীয় নেতাকর্মীদের লালার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষ কিছুদিনের জন্য ওই সভায় যোগদানকারী নেতাদের বাড়িতে থাকার জন্য পরামর্শ দেন। সাময়িকভাবে দলীয় কর্মসূচিও স্থগিত রাখা হয়। পরে অধিকাংশের রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় পুনরায় তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচি শুরু হয় জেলাজুড়ে।
এদিকে বিধায়কের লালার নমুনার রিপোর্ট ট্রুনাট মেশিনে পজিটিভ আসার পরও গত ২ জুলাই পুনরায় তার লালা সংগ্রহ করে মালদায় পাঠানো হয়। কিন্তু চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগেই বিধায়ক একাধিক কর্মসূচিতে যোগদান করেন। এরমধ্যে গত ৬ জুলাই ডিজেল ও পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভ। এই কর্মসূচিতে তৃণমূলের শতাধিক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। একজন বিধায়কের এরকম অবস্থায় প্রকাশ্য কর্মসূচিতে যোগদান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী নেতারা।
কুমারগঞ্জের সিপিএম নেতা মোফাজ্জল হোসেনের প্রশ্ন, শাসকদলের একজন বিধায়ক ও একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে তিনি চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগেই কীভাবে প্রকাশ্য কর্মসূচিতে যোগদান করেন? এটা প্রশাসনেরও ব্যর্থতা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। বিজেপির কুমারগঞ্জ ব্লকের নেতা রজত ঘোষ বলেন, কুমারগঞ্জের বিধায়ক মহামারীর বিষয় নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?
খোদ বিধায়কের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসায় কুমারগঞ্জ ব্লক সহ পুরো জেলাজুড়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও এবিষয়ে কুমারগঞ্জ পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষে কোন মন্তব্য করা হয়নি। উত্তরবঙ্গের মধ্যে এই প্রথম শাসক দলের কোনও বিধায়ক করোনায় আক্রান্ত হলেন। এর আগে শিলিগুড়ির মেয়র ও প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। যদিও বিধায়ক এদিন সুস্থ ও উপসর্গ হীন এবং ভালো রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।