‘জোটের দরকার নেই’, থালাপতি বিজয়ের ‘সিংহের গর্জন’ কি ২৬-র লড়াইয়ে কাজে দেবে?

মাদুরাই: লক্ষ্য ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। মাদুরাইয়ের জনসভায় থালাপতি বিজয় বিজেপিকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সিংহ সিংহই হয়।”

মাদুরাইয়ের বিশাল জনসভায় থালাপতি বিজয় নিজেকে ‘সিংহ’ বলে ঘোষণা করলেন, বললেন তিনি ২৩৪ আসনের প্রার্থী। কিন্তু তার দল (TVK)-এর নির্বাচনী কৌশল কোথায়? বিশ্লেষণ বলছে, জোট ছাড়া তামিল রাজনীতিতে বিজয়ের জয় কঠিন।

তার দল ‘তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম’ (Tamizhaga Vetri Kazhagam বা TVK)-এর হয়ে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একক লড়াইয়ের ঘোষণা দিলেন তিনি। এই ঘোষণায় যেমন তার তারকাখ্যাতির প্রতিফলন রয়েছে, তেমনই রয়েছে রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাসের ছাপ।

বিজয় দাবি করেন, তামিলনাড়ুর রাজনীতি এখন TVK বনাম ‘দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম’ (Dravida Munnetra Kazhagam বা DMK)। তিনি কার্যত ‘অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম’ (AIADMK)-কে অপ্রাসঙ্গিক বলে উড়িয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) এবং DMK নেতা এম কে স্টালিন (MK Stalin)-কে সমানভাবে আক্রমণ করেন তিনি।

তবে প্রশ্ন উঠছে—এই গর্জনের পেছনে কৌশল কোথায়? ইতিহাস বলছে, এম জি রামচন্দ্রন (MGR), জয়ললিতা (Jayalalithaa), এমনকি করুণানিধি (Karunanidhi)-ও এককভাবে ক্ষমতায় আসেননি। প্রত্যেকেই জোটের মাধ্যমে নির্বাচনী অঙ্ক মিলিয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছেন।

বিজয় বলছেন, “আমার জোটের প্রয়োজন নেই।” তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি কেউ তার নেতৃত্ব মেনে নেয়, তাহলে তিনি জোটে আগ্রহী। কিন্তু বাস্তব বলছে, এখনও পর্যন্ত কোনও ছোট দল তার দিকে এগিয়ে আসেনি। অন্যদিকে, DMK ইতিমধ্যেই DMDK-সহ একাধিক দলকে নিয়ে শক্তিশালী জোট গড়ে তুলেছে। AIADMK-বিজেপি (BJP) জোটও তাদের ঘর গোছাচ্ছে।

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ভোটের হার আর আসন জয়ের অঙ্ক এক নয়। ৩০ শতাংশ ভোট পেলেও আসন পাওয়া নিশ্চিত নয়। AIADMK ১৯৯৬ সালে ২৭ শতাংশ ভোট পেয়েও মাত্র ৪টি আসন জিতেছিল। DMK ২০১১ সালে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েও মাত্র ৩১টি আসন পেয়েছিল। অর্থাৎ, জোট ছাড়া বিজয়ের একক লড়াই কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিজয়ের জনপ্রিয়তা নিঃসন্দেহে বিশাল। তার সংলাপ, “আমি ২৩৪ আসনের প্রার্থী”—ভক্তদের উন্মাদনায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাস্তব রাজনীতিতে ২৩৪টি আসনে শক্তিশালী প্রার্থী খুঁজে বের করা, সংগঠন গড়ে তোলা, এবং ভোটে রূপান্তর ঘটানো—এগুলোই আসল চ্যালেঞ্জ।

AIADMK-এর বর্তমান নেতা এডাপ্পাডি পালানিস্বামী (Edappadi Palaniswami বা EPS)-এর হয়তো MGR বা জয়ললিতার মতো ক্যারিশমা নেই, কিন্তু তার রয়েছে দলীয় কাঠামো, জাতিগত ভিত্তি এবং MGR-এর ‘দুই পাতা’ প্রতীক। বিজয় AIADMK-কে ধাক্কা দিতে পারেন, কিন্তু কতটা ধাক্কা দেবেন, সেটাই EPS-এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

অন্যদিকে, বিজয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ হলেও তার জনপ্রিয়তা জাত-ধর্মের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে। সংখ্যালঘু, দলিত এবং তরুণদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রবল। যদি এই গ্রহণযোগ্যতা ভোটে পরিণত হয়, তাহলে DMK-এর জন্যও বিপদ ঘনাতে পারে।

শেষ কথা, বিজয় গর্জন করেছেন। তার গলা স্পষ্ট, শক্তিশালী। কিন্তু তামিল রাজনীতির বাস্তবতায় জয় পেতে হলে তাকে শুধু গর্জন নয়, কৌশলও দেখাতে হবে। দল গড়তে হবে, প্রার্থী নামাতে হবে, এবং ভোটের অঙ্ক মিলিয়ে আসন জিততে হবে। সিংহের গর্জন যদি শিকারে পরিণত হয়, তবেই বদল আসবে।

About The Author