কলকাতা: ‘নবান্ন চলো’ কর্মসূচির প্রাক্কালে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওতে তাঁকে কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে উদ্দেশ করে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করতে শোনা যায়। ৮ মিনিটের ওই ভিডিওর ৭ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের সময় তিনি বলেন—“শুয়োরের বাচ্চা”—যা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে থাকা এক আধিকারিকের প্রতি নজিরবিহীন আক্রমণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এই ভিডিওটি শুভেন্দু অধিকারীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সম্প্রচারিত হয়, যেখানে তিনি ডাক্তার অভয়া দেবীর পরিবারের আহ্বানকে সামনে রেখে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বার্তা দেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি আন্দোলনের নৈতিকতা ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করলেও, শেষের দিকে তাঁর ভাষা ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি যে শব্দচয়ন করেন, তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী বলে মনে করছেন অনেকেই।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। দলের একাধিক নেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে শুভেন্দুর অনুগামীদের একাংশ তাঁর মন্তব্যকে “রাগের বহিঃপ্রকাশ” বলে ব্যাখ্যা করছেন।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মন্তব্য সরকারি কর্মচারীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে এবং তা দণ্ডনীয় অপরাধের আওতায় পড়তে পারে। যদিও কলকাতা পুলিশের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে প্রশাসনের অভ্যন্তরে এই মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বলেই সূত্রের খবর।
রাজ্য রাজনীতিতে ভাষার শালীনতা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। কিন্তু বিরোধিতা ও প্রতিবাদের নামে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং অশালীন শব্দচয়ন কি গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে? শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্য সেই প্রশ্নই আবারও সামনে এনেছে। রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু প্রশাসনের প্রতি সম্মান বজায় রাখা কি রাজনীতির ন্যূনতম শিষ্টাচার নয়?
এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী তাঁর মন্তব্যের বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তবে রাজ্য রাজনীতির উত্তাপ যে এই মন্তব্য ঘিরে আরও বাড়বে, তা বলাই যায়।