কলকাতা: ভিনরাজ্যে গিয়ে বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয়ের কারণে হেনস্থার শিকার হয়েছেন লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক, এমনই অভিযোগ রাজ্যের শাসক শিবিরের। এবার তাঁদের জন্য সরাসরি পুনর্বাসনের পথে হাঁটল রাজ্য সরকার।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন নতুন প্রকল্প— ‘শ্রমশ্রী’ (Shramshree)। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলায় ফিরে আসা শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এককালীন ৫ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, পরবর্তী এক বছর ধরে মাসে মাসেও তাঁরা পাবেন ৫ হাজার টাকা করে ভাতা।
মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ‘‘যাঁরা ফিরবেন, তাঁরা ভ্রমণ সহায়তা-সহ এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন। এটা পুনর্বাসন ভাতা। নতুন কাজের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এই সাহায্য চলবে।’’ এই প্রকল্পের নোডাল দফতর হিসেবে দায়িত্বে থাকবে রাজ্যের শ্রম দফতর (Labour Department) । পাশাপাশি ‘উৎকর্ষ বাংলা’ (Utkarsh Bangla) প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষতা যাচাই করে দেওয়া হবে ‘স্কিল ট্রেনিং’ (Skill Training) । প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করবে রাজ্য।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আরও একাধিক সুবিধার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের দেওয়া হবে ‘জব কার্ড’ (Job Card), খাদ্যসাথী (Khadya Sathi) ও স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) কার্ড। যাঁদের বাড়ি নেই, তাঁদের জন্য থাকবে কমিউনিটি কোচিং সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি, কন্যাশ্রী (Kanyashree), শিক্ষাশ্রী (Shikshashree)—সব ধরনের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধাও মিলবে।
মমতা বলেন, ‘‘বাংলার ২২ লক্ষ ৪০ হাজার শ্রমিক বর্তমানে ভিনরাজ্যে রয়েছেন। তাঁরা সকলেই ‘শ্রমশ্রী’-র সুবিধা পাবেন। যাঁরা এখনও নাম নথিভুক্ত করেননি, তাঁরা ‘শ্রমশ্রী পোর্টাল’-এ (Shramshree Portal) গিয়ে নাম তুলতে পারবেন। তাঁদের দেওয়া হবে একটি আই কার্ড, যার মাধ্যমে রাজ্য সরকারের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মিলবে।’’
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক রাজ্যে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার ৭০০ পরিবার ভিনরাজ্যে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। ‘‘আমরা তাঁদের ফিরিয়ে এনেছি, অনেকে নিজেরাও ফিরছেন। তাঁদের পুনর্বাসনের জন্যই এই প্রকল্প।’’ সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘কোভিডের সময়ও আমরা পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। এবারও দাঁড়াচ্ছি। বাইরের রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই অপরাধী তকমা দেওয়া হচ্ছে, কেউ কেউ খুন হচ্ছেন, এমনকি মৃতদেহ পর্যন্ত ফিরিয়ে আনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বাংলার শ্রমিকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করাই আমাদের লক্ষ্য।’’