বাংলাদেশের জনক যাকে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবুর রহমান—যাঁর নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল—তাঁকেই আর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে না।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যার ফলে বঙ্গবন্ধু-সহ প্রায় ৪০০ জন রাজনৈতিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের চার শতাধিক সদস্যকে আর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। তাঁদের পরিচয় এখন থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন
এ অধ্যাদেশে আরও চারটি শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’তে রূপান্তরিত করা হয়েছে। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের (মুজিবনগর) অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, দূত ও অন্যান্য সহকারীরা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী এবং মুক্তিযুদ্ধপন্থী দেশি-বিদেশি সাংবাদিকেরা। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।
আগের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২ অনুযায়ী, এই পাঁচ শ্রেণির সবাইকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হতো। নতুন অধ্যাদেশে তাঁদের পরিচয় বদলে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিতর্কগত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই সময় বিক্ষোভকারীদের বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙতে দেখা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে টাকার নোট থেকেও বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। এবার তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও শোরগোল শুরু হয়েছে।
১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার ভিত্তিতে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদিত হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে এটি কার্যকর করা হয়।
বিরোধী দল ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করছে, অনেকেই এটিকে ইতিহাস বিকৃতি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন।