৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ রাজ্যের সব স্কুল, তবে কলেজ খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি: শিক্ষামন্ত্রী

কলকাতা: করোনা পরিস্থিতিতে ১০ জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল রাজ্যের সব বিদ্যালয়। ১০ জুনের পর স্কুলগুলি খোলা হবে কি না, খোলা হলেও কোন নিয়মে হবে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক মহল, সব স্তরেই আলোচনা চলছিল। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয় রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু স্কুল। সবমিলিয়ে ১০ জুনের পরিবর্তে ৩০ জুন পর্যন্ত রাজ্যের স্কুলগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।

আজ সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানান করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। করোনা আবহে স্কুল খোলার বিষয়ে আজ দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৈঠকে আমফান ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়টিও ছিল। সেখানে করোনা ও আমফানের জেরে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা বিবেচনা করেই ৩০ জুন পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমফানের বিভৎসতায় মূলত আটটি জেলা হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জেলাগুলি ছাড়াও অন্য জেলাগুলিতে অল্পবিস্তর ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার স্কুলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও রুম ভেঙে গেছে, কোথাও বাথরুম ভেঙেছে, কোথাও মিড-ডে মিলের রান্নাঘর নষ্ট হয়েছে। এর সঙ্গে আরও একটি সমস্যা রয়েছে । পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরে আসছেন। তাঁদের রাখার ব্যবস্থা করা, আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা এই অতিরিক্ত কাজগুলি স্কুলের মধ্যে এসে গেছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে । আমরা ঠিক করেছি, স্কুলগুলি ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।” শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “এই পরিস্থিতিতে স্কুল খুললেও সেগুলিকে জীবাণুমুক্ত করা, দূরত্ব বজায় রাখা, এই সমস্ত কিছু বজায় রাখা একটা বড় সমস্যা । সব দিক বিবেচনা করেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি । “

তবে, স্কুল বন্ধ থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখার জন্য বিকল্প পরিকল্পনা করেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর। একাজে শিক্ষকদের কাজে লাগাতে চায় দপ্তর। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় হল, ছাত্র-ছাত্রীদের কীভাবে পড়াশোনা করানো যায়? ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে আমরা একটা বিকল্প রাস্তার কথা চিন্তা করছি যাতে, শিক্ষকরা স্থানীয়ভাবে দল বেঁধে গিয়ে তাঁদেরকে পড়াতে পারেন । আমাদের যে সমস্ত কো-অর্ডিনেটররা আছেন, জেলা পরিদর্শক, সার্কেল ইন্সপেক্টররা আছেন, তাঁরা নামের তালিকা তৈরি করবেন । স্থানীয় এলাকায় যে শিক্ষকরা আছেন তাঁরা ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি গিয়ে যতটা পারবেন পড়ানোর চেষ্টা করবেন । আমি শিক্ষক সমাজের কাছে আবেদন জানাব, তাঁরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাছাকাছি যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী আছে, তাদের পড়ানোর ব্য়বস্থা করে ।

উচ্চমাধ্যমিকের বাকি থাকা পরীক্ষাগুলির দিন আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আজ সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিকের যে সমস্ত পরীক্ষাগুলি বাকি আছে সেগুলি ২৯ জুন, ২ ও ৬ জুলাই হবে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রয়োজন হলে কলেজকে ব্যবহার করতে হবে। আমি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাসের সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনা করেছি। তাঁকে বলেছি, যাতে কোনও রকম স্বাস্থ্যবিধির ব্যাঘাত না ঘটে। স্যানিটাইজ় করা, যতটা সম্ভব কাছে পরীক্ষাকেন্দ্র করে দেওয়ার বিষয়ে দেখতে বলেছি। যেখানে অল্প একটু দূরত্ব থাকবে, সেখানে হয়তো আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা থাকবে। এখনও পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে আটটি জেলায় আমাদের প্রস্তাবিত ১০৫৮টি পরীক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে ৪৬২ টি পরীক্ষাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার বিকল্প আজকে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আটটি জেলাতে ৪৭০ টির মতো স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। সেগুলি পরিবর্তন করে কাছাকাছি করা হয়েছে।’ তিনি আজ আবারও জানিয়ে দেন, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ হওয়ার দিন থেকে একমাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করার চেষ্টা করা হবে।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেভাবে চলছে, তাঁরা সেভাবেই চলবে, সিদ্ধান্ত নেবে। আমি বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। ওরা যে পরিকল্পনামাফিক কাজ করছে, সেই পরিকল্পনাকে ব্যাহত করতে চাই না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

আমফানে রাজ্যের বহু স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু পড়ুয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেবিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ঝড়ে যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি, বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা করার। বই দেওয়া যায় কি না দেখছি। ঝড়ে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিকল্প বই দেওয়া যায় কি না সেটা দেখা হচ্ছে। এই প্রস্তাবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই পদক্ষেপ করব। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষতির হিসেব বিশ্লেষণ করেও পাঠিয়েছি আমরা।’