চাকরি বাতিলের তালিকায় তৃণমূল নেতার ছেলের নাম, কটাক্ষ বিরোধীদের

রাজগঞ্জ: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রুপ সি পদে কর্মরত ৭৮৫ জনের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। সেই তালিকায় ২৬২ নম্বরে নাম রয়েছে রাজগঞ্জ সন্ন্যাসিকাটা হাইস্কুলে করনিক হিসেবে কর্মরত জয়ন্ত দাসের।

ঘটনাচক্রে জয়ন্ত’র বাবা দুধকুমার দাস তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির একজন সদস্য। বিরোধীদের কথায় তিনি এলাকার ‘দাপুটে’ নেতা। সমাজমাধ্যমে তাই এই নিয়ে জোর আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তালিকায় থাকা জয়ন্ত’র নামের পাশে ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন অনেকেই। 

২০১৬ সালের পরীক্ষা দিয়েছিলেন রাজগঞ্জের মাঝিয়ালি পাথরঘাঁটা এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত দাস। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজগঞ্জ সন্ন্যাসিকাটা হাইস্কুলে গ্রুপ-সি পদে চাকরি পান। প্রায় ৫ বছর করণিক হিসেবে কাজ করেছেন জয়ন্ত। সন্ন্যাসীকাটা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় দাস বলেন, স্কুলে প্রায় ৪ বছর ধরে কাজ করছে। চাকরি বাতিলের ব্যাপারে শুনেছি। যদিও স্কুলে এখনও কোনও নির্দেশিকা এসে পৌঁছায়নি। নির্দেশ এলে সেই মতই ব্যবস্থা হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট মোট ৮৪২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ৫৭ জন যারা সুপারিশ না পেয়ে চাকরি করছেন, তাঁদের চাকরি বাতিল করবে আদালত। আর ৭৫৮ জন (যাদের ওএমআরে কারচুপি হয়েছে) তাদের সুপারিশ প্রত্যাহার করবে কমিশন। সেই ৭৫৮ জনের তালিকায় নাম রয়েছে জয়ন্ত’র।

জয়ন্ত দাসের বাবা দুধকুমার দাস মাঝিয়ালি অঞ্চলের একজন ‘দাপুটে’ তৃণমূল নেতা এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই এর সঙ্গে শাসকদলের যোগ খুঁজছেন। ঘটনা প্রসঙ্গে দুধকুমার দাস বলেন, ‘ছেলের চাকরি গিয়েছে, এই ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই। পুরোটাই বিচারাধীন বিষয়। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। লোকজনের আলোচনায় গুরুত্ব দিতে চাইনা।’

এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে জয়ন্ত দাসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত জয়ন্ত বলেন, ‘পড়ে কথা বলছি।’ যদিও পড়ে আর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে জয়ন্ত দাসের ওএমআর শিটে কোনও কারচুপি নেই বলেই দাবি। ( লিঙ্ক )

চাকরি বাতিলের তালিকায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্যের ছেলের নাম থাকা নিয়ে কটাক্ষ শুরু করেছে বিরোধী মহল। তৃণমূল নেতার ছেলের চাকরি গিয়েছে, এই নিয়ে বাম ছাত্র সংগঠনের অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি করেছেন। 

এই ব্যাপারে রাজগঞ্জ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অরিন্দম ব্যানার্জি‌ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। দল স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে। আমরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি। আগামীতেও দেব না।’ 

বিজেপির ব্লক সভাপতি নিতাই মণ্ডলের দাবি, ‘ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা সরব হয়েছি। হাইকোর্টের নির্দেশে সেই খোলসা হচ্ছে। যোগ্যদের বঞ্চিত রেখে শাসকদলের নেতারা চাকরি চুরি করে তা আবারও প্রমাণিত হল।’

কেন চাকরি বাতিল হল?

হাইকোর্টের নির্দেশে স্কুল সার্ভিস কমিশনের যে তিন হাজার ৪৭৭ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে ৩ হাজার ১১৫ জন চাকরি প্রাপকের ওএমআর শিটে গরমিল রয়েছে। কমিশনের নির্দে‌শিকায় লেখা রয়েছে ‘…having manipulations found in their OMR data’। 

আদালতের নির্দেশে ৩১১৫ জনের নাম বৃহস্পতিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে এসএসসি। সেই তালিকায় সুপারিশ পাওয়া ৭৮৫ জনের নাম এবং সুপারিশ ছাড়া ৫৭ জন, মোট ৮৪২ জনের চাকরি বাতিল করল আদালত।

About The Author