রাজগঞ্জ: স্ত্রী চোখে দেখতে পান না, স্বামী চলা ফেরা করতে পারেন না। জন্ম থেকেই এরকম, তা নয়। সঠিক চিকিৎসার অভাবে আজ তাদের এমন দশা। ভাঙ্গাচোরা ঘরে তীব্র অভাবের ছাপ স্পষ্ট। কুয়ো নেই, জল নেই, ছাদ নেই, স্নান-পায়খানার জায়গা নেই, শুধু নেই আর নেই। চরম অভাবের মধ্যে কোনওমতে বেঁচে রয়েছেন যেন। এমন হতদরিদ্র পরিবারটির থেকে আবাস যোজনার জন্য কাটমানি অবধি নেওয়া হয়েছিল, তারপরও মেলেনি ঘর। এমনই পোড়া কপাল রাজগঞ্জের কুকুরজান অঞ্চলের নাওয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শুকানু রায়ের।
বছর পাঁচেক আগে স্ট্রোকের জেরে শরীরের একটি পাশ অচল হয়ে গেছে তাঁর। কোনওমতে টেনে হিঁচড়ে চলার চেষ্টা করেন। স্ত্রী চোখে দেখতে পান না আট বছর হল। অসুখ করার পর সরকারি হাসপাতালে যেটুকু সম্ভব চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু সেখান থেকে কলকাতা রেফার করে দেওয়ার পর আর ক্ষমতায় কুলোয়নি। স্ত্রীর চোখের সমস্যা সঠিক সময়ে না সারাতে পেরে অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে দুজনের সম্বল লাঠি এবং তাদের দুই ছেলে। বড় ছেলেই দিনমজুরী করে কোনওরকমে সংসারের হাল ঠেলছেন। অর্থের অভাব এবং পরিবারের সমস্যার জেরে পড়াশোনা করতে পারেননি। ছোট ছেলে এবারে মাধ্যমিক দেবে।
সংসারে একমাত্র রোজগেরে বলতে বড় ছেলে তাপস রায়। সে জানাল, বাড়িতে কুয়ো নেই, ভালো ঘর নেই, জলের ব্যবস্থা নেই। সরকারের তরফে ঘর পাওয়ার আশা ছিল কিন্তু গেল পঞ্চায়েত সেখান থেকেও কাটমানি নিয়ে আর ঘর দেয়নি। বর্তমান প্রশাসনের নজরেও অবহেলিত পরিবারটি। এখন চাওয়া বলতে, বাবা মা যেন চলতে পারে সেই ব্যবস্থা। বৃদ্ধ দম্পতির কারোরই প্রতিবন্ধী সারটিফিকেট হয়নি। সেকারনে পাচ্ছেন না কোনও ভাতাও।
শুকানু বাবু বলেন, ‘যদি সরকার আমাদের সাহায্য না করতে পারে, তাহলে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন গ্রহণ করুক।’ এই বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং প্রধানকে জানালে তাদের দাবি, বিষয়টি তারা জানেন না তবে দেখবেন। দুয়ারে সরকারের মাধ্যমেও সাহায্য পাবার ব্যাপারে আশা দেখলেন না কেউই। তবে এদিকে পরিবারটির যেমন অবস্থা তাতে করে মানবিকতার অভাব তাদের জন্য মারনাত্মক হতে পারে। এমনটাই জানালেন কয়েকজন এলাকাবাসী।