২০ বছরেও ঘর মেলেনি! কলা ব্যবসায়ীর উঠোনে চলছে আইসিডিএস সেন্টার

রাজগঞ্জ: সরকারি খাতায় আইসিডিএস সেন্টার রয়েছে, বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থাও হচ্ছে খাতায় কলমে; কিন্তু নেই কোনও নির্দিষ্ট ঘর। গ্রামেরই এক পরিবার নিজের বাড়ির উঠোনে সেই সেন্টার পরিচালনার জন্য জায়গা দিয়েছেন। হেল্পার আসছেন, রাধুনি আসছেন। পাড়ার শিশু-অভিভাবকেরা সেই বাড়িতে এসে নিয়ে যাচ্ছেন প্রাপ্য খাবার। প্রায় ২০ বছর ধরে এভাবেই চলছে রাজগঞ্জ ব্লকের পানিকৌড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পঁয়াচরি এডিশনাল আইসিডিএস কেন্দ্র।

স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী আমরুল মহম্মদ তাঁদের বাড়ির উঠোনের এক পাশে রোজ এই কাজের জন্য জায়গা ছেড়ে রাখেন। উঠোনে একটি উনুন আছে। বর্ষায় তাঁদের পরিবারের রান্নাঘরে বাচ্চাদের জন্য রান্না করা হয়। আমরুল জানান, দীর্ঘ দিন ধরে গ্রামে সেন্টারের জন্য কোনও ঘরের ব্যবস্থা হয়নি। বাম আমলে শুরু হয়েছিল, কিন্তু শেষ হয়নি কোনওদিন। অব্যবস্থা দেখে আমি ব্যক্তিগত ভাবে বাচ্চাদের জন্য, গ্রামবাসীদের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। ৬ বছর আগে লিখিত ভাবে জমিও দিয়েছি। কিন্তু এখনও সেই ব্যবস্থা হয়নি। নতুন করে সরকার যাতে ঘর করতে পারে, তার জন্য আমি বাড়ির একটি অংশ ছেড়ে রেখেছি।

স্থানীয় অভিভাবকেরা অভিযোগ করছেন, বছর ১৫ আগে বাম আমলে একটি ঘর তৈরির কাজ শুরু হলেও তা কোনওদিন সম্পূর্ণই হয়নি। বর্তমানে তার একটি অংশ মিশে গিয়েছে পাশের বাড়ির ভিটেয়। বর্তমান সরকারের আমলে সার্ভে হলেও নতুন করে সেন্টারের জন্য কোনও ঘরের ব্যবস্থা হয়নি। গ্রামের একাংশ জানান, একটি বাড়িতে গিয়ে তাঁদের রান্নাঘরে তৈরি খাবার সবাই খেতে চাইছে না।

রেনুকা রায় নামের এক মহিলা বলেন, বাচ্চাকে রোজ নিয়ে আসি। কিন্তু বসার জায়গা নেই। তাই ডিম নিয়েই বাড়ি ফিরে যাই। আমি শুনেছি রাজগঞ্জের বিডিও সাহেব অনেক জায়গায় ভিজিট করেন। আমার আবেদন তিনি যেন আমাদের এই আইসিডিএস সেন্টারটিও একবার ভিজিট করে দেখেন। এলাকার বাসিন্দা সবিতা সরকার বলেন, কোন সপ্তাহে আড়াইটা ডিম পাই তো কোন সপ্তাহে দেড়টা। বর্ষার সময় এই বাড়ির বারান্দায় দাঁড়াই ডিম নেওয়ার জন্য।

এই বিষয়ে দক্ষিণ পঁয়াচরি অ্যাডিসনাল আইসিডিএস কেন্দ্রের ওয়ার্কার ফাল্গুনী সরকার বলেন, সেন্টারের ঘরের ব্যবস্থা না হলেও খাবার যার যেমন প্রাপ্য তেমনটাই দেওয়া হয়। ঘর নেই অন্যের বাড়িতে কষ্ট করে হেল্পার রান্না করে বাচ্চাদের খাওয়ার দেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা আজিনা খাতুন ভোটের কারণ দেখিয়ে এই ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। রাজগঞ্জের সিডিপিও দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ওই সেন্টারের ঘরের জন্য বিডিও অফিসে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। খাওয়ার নিয়ে যদি কোনও অভিযোগ থাকে তবে তা খতিয়ে দেখা হবে।