জলপাইগুড়ি: রাজগঞ্জের বালাবাড়ি এলাকার এক নাবালিকার সঙ্গে ২০২০ সালে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনা আজও স্থানীয়দের মনে তীব্র ক্ষতের মতো রয়ে গেছে। এক নাবালিকাকে প্রেমের সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ও পরে খুনের অভিযোগ। দেহ মিলেছিল সেপটিক ট্যাঙ্কে। ৫ বছর ধরে চলা বিচারপর্ব শেষে তিন অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করে তাদের ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা আদালত।
২০২০ সালের অগাস্ট মাসের ঘটনা। সন্ন্যাসীকাটা অঞ্চলের বালাবাড়ির নাবালিকাটি প্রায় ১৩ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। গ্রামের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজ চালাতে থাকেন, কিন্তু কোনো সূত্র মেলেনি। পরে তার দেহ উদ্ধার হয় একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে। এই ঘটনার পর গোটা রাজগঞ্জ উত্তাল হয়ে ওঠে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা এলাকা। রাজনৈতিক মহলেও অস্থিরতা তৈরি হয়। রাজগঞ্জ থানার সামনে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা, দাবি ওঠে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে যখন ওসির সঙ্গে অভিযুক্তদের একত্রে সিগারেট খাওয়ার ছবি সামনে আসে। জনমত সে সময় এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে থাকে।
তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক খগেশ্বর রায় ওসির বদলির দাবিতে সরব হয়ে ওঠেন। ধর্ষকদের শাস্তি এবং ওসির বদলির দাবিতে আন্দোলন করে বাম-বিজেপিরাও। বিজেপির তরফে তাবড় তাবড় সেদিন হাজিরা দিয়েছিলেন রাজগঞ্জের ওই বাড়িতে। গণআন্দোলন সংঘটিত হয়। এই মামলা শুধু অপরাধ নয়—এটি রাজনীতির, প্রশাসনের, ও সামাজিক সচেতনতার এক সঙ্কটময় অধ্যায় হয়ে ওঠে।
পাঁচ বছর দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে জলপাইগুড়ি আদালত রহমান আলী, জমিরুল হক এবং তমিরুল হক নামক তিন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। এই রায় সামাজিক ন্যায়বিচারের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে। যদিও ন্যায় আসতে সময় নিয়েছে, কিন্তু এই রায় সমাজে বার্তা দিয়েছে—অপরাধ যতই ভয়াবহ হোক, তার পরিণাম অনিবার্য।