জাপান সফরে মোদীর হাতে ‘সৌভাগ্যের প্রতীক’ ‌দারুমা পুতুল উপহার

জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তুলে দেওয়া হল এক দারুমা পুতুল—জাপানের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সৌভাগ্যের প্রতীক। শোরিনজান দারুমা-জি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সেইশি হিরোসে এই উপহার দেন মোদীকে, যা নিছক স্মৃতিচিহ্ন নয়, বরং অধ্যবসায়, সংকল্প ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে সম্মানিত।

দারুমা শব্দটি এসেছে বোধিধর্ম থেকে, যিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক। লোককথা অনুযায়ী, তিনি ন’বছর একটানা ধ্যান করেছিলেন, যার ফলে তাঁর হাত-পা ক্ষয়ে গিয়েছিল। সেই স্মৃতিতেই দারুমা পুতুলের গড়ন—হাত-পা ছাড়া, শুধু মাথা ও ধড়। চোখের আকৃতি বড় ও তীক্ষ্ণ, কারণ বিশ্বাস করা হয়, ধ্যানের সময় ঘুম না আসার জন্য তিনি নিজের চোখের পাতা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন।

প্রথাগতভাবে দারুমা লাল রঙের হয়, যা একসময় মহামারির বিরুদ্ধে দেবতার অনুগ্রহ চাওয়ার প্রতীক ছিল। আজকাল হলুদ, সাদা সহ নানা রঙের দারুমাও পাওয়া যায়—প্রতিটি রঙের রয়েছে আলাদা তাৎপর্য। মুখের নিচে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকে “ফুকু-ইরি”, অর্থাৎ “ভাগ্য আনা।”

তাকাসাকি শহরে তৈরি হয় প্রায় ৮০ শতাংশ দারুমা পুতুল। ১৭ শতকে সেখানকার কৃষকরাই প্রথম এই পুতুল বানাতে শুরু করেন। এমনভাবে বানানো হয় যাতে ঠেলেও ফেলে দিলে আবার উঠে দাঁড়ায়—প্রতীক হয়ে ওঠে “সাতবার পড়লেও আটবার উঠে দাঁড়াও।”

নতুন বছরের শুরুতে অনেকেই দারুমা কিনে থাকেন নতুন লক্ষ্য পূরণের আশায়। কেউ যখন কোনও ইচ্ছে স্থির করেন, তখন পুতুলের এক চোখে রঙ ভরেন। ইচ্ছে পূর্ণ হলে রঙ করা হয় অন্য চোখে। এক বছরের মধ্যে ইচ্ছেপূরণ না হলে সেই দারুমা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিশেষ পূজার পর পোড়ানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই উপহার নিছক সৌজন্য নয়—জাপানি সংস্কৃতির গভীর বার্তা বহন করে। অধ্যবসায়, সৌভাগ্য ও সংকল্পের প্রতীক হিসেবে এই পুতুল আজ বিশ্বজুড়ে সম্মানিত।

About The Author