ঢাকা: দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্কের পর ঢাকায় তিন দিনের সফরে এলেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। ২০১২ সালের পর এই প্রথম কোনও পাক বিদেশমন্ত্রী বাংলাদেশে এলেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন রবিবার, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হাসানের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা বিলুপ্তি, বাণিজ্যিক সহযোগিতার যৌথ কমিটি গঠন এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য।
এই সফরকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলা হলেও, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অমীমাংসিত বিষয়গুলি আবারও সামনে আসে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ইশাক দার দাবি করেন, এই সমস্যাগুলির সমাধান ১৯৭৪ সালের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি এবং ২০০০ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সফরের সময়ই হয়ে গেছে। তাঁর মতে, “১৯৭৪ সালের দলিলটি দুই দেশের জন্য ঐতিহাসিক।”
তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যে কোনও জোরালো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “দু’পক্ষ একমত হলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়েই যেত। বাস্তব তেমনটা নয়।” তাঁর কথায়, ৫৪ বছরের সমস্যা একদিনে মিটে যাবে, এমন আশা ঢাকা করে না। তবে আলোচনা চলতে পারে।
এই সফরের সময় ইশাক দার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বাসভবনে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে এই সফর শুধু দুই দেশের সম্পর্কের পুনর্মিলন নয়, বরং ইতিহাসের দায় ও ন্যায়ের প্রশ্নও। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনার হাতে ৩০ লক্ষ বাঙালির প্রাণহানির দাবি আজও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি পায়নি। ক্ষমা, ক্ষতিপূরণ, এবং সম্পদের ন্যায্য ভাগের দাবি এখনও অমীমাংসিত। পাকিস্তানের তরফে বারবার ‘সমাধান হয়ে গেছে’ বলা হলেও, বাংলাদেশের ক্ষত এখনও গভীর।