অস্তমিত নারায়ণ দেবনাথ, শৈশবের এক রঙিন অধ্যায় শেষ হল

অরিজিৎ পাল: আমাদের ছেলেবেলায় সে একটা সময় ছিল; তখন চৌকো স্ক্রিন কিংবা গেমিং স্টেশন ছিল কল্পনাতীত। অলস দুপুরে অপুকাকুর দোকান থেকে কিনে আনা নতুন কমিক্সের পাতা উল্টে নতুন নতুন ছবিতে গল্পের অপূর্ব আস্বাদন। বাঁটুলের দুই বিচ্ছুকে শায়েস্তা করার গল্প, হাঁদা-ভোঁদার খুনসুটি কিংবা নন্টে-ফন্টের দুষ্টুমিতেই গোটা দুপুর পার হয়ে যেত।

মাঝে মধ্যেই আলাদা আলাদা খণ্ডগুলোর প্রচ্ছদ ছিঁড়ে সবকটা খণ্ডকে একসঙ্গে জুড়ে নিতাম, যাতে একেবারেই পড়া যায়। একটি ছোট্ট অংশও যাতে হারিয়ে না যায়, তার আপ্রাণ চেষ্টা। ক্লাসের পড়া ছেড়ে বেশি কমিক্স পড়ার জন্য বাবার বকুনিকে অনেক সময় পিসেমশাই অথবা সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্যারের বকুনি বলে মনে হত।

পাড়ার যে দাদাটা বয়স একটু বেশি বলে মাঠে একটু বেশিক্ষণ ব্যাটিং করত, তাকে হঠাৎ করেই কেল্টুদা বলে মনে হত। ভোঁদার কাছে হাঁদা বারবার হেরে যেত বলে একটু অভিমানও হত। কারণ হাঁদার সঙ্গেই নিজের মিল পেতাম বেশি। অপেক্ষা করতাম শুকতারার নতুন সংখ্যার, কারণ তাতে দেখা মিলবে বাহাদুর বেড়াল কিংবা গোয়েন্দা কৌশিকের।

মঙ্গলবার সকাল সকাল চলে গেলেন শৈশবকে রঙিন করে দেওয়া সেই মানুষটি। শুকতারার জন্য অপেক্ষা করার অবসান হয়েছিল বয়সের কারণেই, কিন্তু কবে আপনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন, তার অপেক্ষা করতাম। এর আগে যখন অসুস্থ হয়েছিলেন, ডাক্তাররা বলেছিল, আপনার মস্তিষ্কে জরা ধরেনি। এটা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম, কারণ যে মানুষটির তুলিতে জীবন্ত হয়ে রয়েছে শৈশবের দিনগুলি, তিনি কি বৃদ্ধ হতে পারেন? কিন্তু আজ যেন সে সবকিছুরই অবসান ঘটল।

আপনি থেকে যাবেন, নারায়ণ দেবনাথ। নাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ‘ইরক’, ‘গদাম’ শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচয় করানোর দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন কে?


About The Author