জলপাইগুড়ি: মেলায় নাগরদোলা চড়তে গিয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় আহত বেশ কয়েকজন। মাথা ফেটে রক্তারক্তি কাণ্ড। এমনই খবরে শোরগোল এলাকায়। বাড়ির পাশের মেলায় এমন কাণ্ড নয়ত! সামাজিক মাধ্যমেও রীতিমত ভাইরাল হল ভিডিও।
ভাইরাল ভিডিওয় প্রথমটায় দেখে মনে হতেই পারে, এটাতো বাড়ির পাশের মেলার ভিডিও। তবে যখন একে-ওকে বলেও মেলার দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করা গেল না, তখন থেকেই শুরু হল নতুন বিভ্রান্তি। কোথায় ঘটল এমন কাণ্ড? আচমকা বাড়ির পাশের মেলা নিয়ে কি গুজব ছড়িয়েছে এলাকায়? নাকি মেলা কর্তৃপক্ষই ঘটনার কথা চেপে যাচ্ছেন! যাইহোক, সেই ভাইরাল ভিডিও নিয়ে দিনভর বিভ্রান্ত হয়ে রইল সাধারণ মানুষ। বিভ্রান্তির জেরে মেলার শেষ লগ্নে এসে মার খেলেন নাগরদোলা ব্যবসায়ীরা। ভাইরাল ভিডিওর জেরে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার বেশ কিছু মেলাকে ঘিরে গুজব ঘনীভূত হয়ে রইল সারাটাদিন।
এখন প্রশ্ন হল, ভিডিওটিকি ফেক? উত্তর, না। ভিডিওটি ফেক নয়। তবে আসল ঘটনা কি? আসল ঘটনা হল, নাগরদোলা দুর্ঘটনার ভাইরাল ভিডিওটি বাংলার কোনও মেলার নয়! তাহলে কোথাকার ঘটনা? সত্যিটা হল, নাগরদোলা দুর্ঘটনার ভাইরাল ভিডিওটি আমদানি করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ থেকে। উত্তরপ্রদেশের ঘটনার খেসারত দিচ্ছে বাংলার ব্যবসায়ীরা।
উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ জেলার মেহের ধাম মেলায় গত মঙ্গলবার ঘটেছে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। সেখানে নাগরদোলা চলতে থাকা অবস্থায় গ্রিল ভেঙ্গে নীচে পড়ে যান কয়েকজন। ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪ জন। ঘটনার পরপরই ভাঙচুর চালান স্থানীয় মানুষজন। ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় ভিডিও।
আসল ঘটনার প্রায় ২-৩দিন পর উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মেলার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে থাকে মোবাইলে মোবাইলে। অনেকেই নিশ্চিত না হয়েই না জেনে বুঝে ছড়িয়ে দেন সামাজিক মাধ্যমে। জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ভদ্রেশ্বর মেলা, ময়নাগুড়ির জল্পেশ মেলা, দার্জিলিং জেলার মাটিগাড়া চাঁদমুনি সহ উত্তরবঙ্গের আরও কিছু জায়গায় শিবরাত্রি উপলক্ষে চলা মেলার সঙ্গে ভিডিওটি জুড়ে দিয়েছেন স্থানীয়দের একাংশ। এবং এভাবেই শুরু হয় চরম বিভ্রান্তি। এই ঘটনার জেরে নাগরদোলা ব্যবসায়ীরাও লোকসানের মুখে পড়েন।
রাজগঞ্জের ভদ্রেশ্বর মেলার শেষ দিন অর্থাৎ শুক্রবার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ভুল ভিডিওটি। আতঙ্কে অনেকেই মেলায় নাগরদোলার ধারে কাছেও যাননি। এখানে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে নাগরদোলা লাগান শিলিগুড়ির বাসিন্দা পরিতোষ মণ্ডল। তাঁর কথায়। গতকাল বেলা হতেই অনেকেই এই ভুল ভিডিও নিয়ে আমাকে ফোন করেন। আমি সবাইকে বিষয়টি ভুল জানিয়ে দিয়। তবে মেলার শেষ দিনেও আতঙ্কে প্রায় কেউই নাগরদোলায় বসেনি। তাঁর অভিযোগ, কেউ ইচ্ছে করে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরিতোষ বাবু বলেন, এর বিরুদ্ধে সাইবার থানায় অভিযোগ জানাবেন। এদিকে, ময়নাগুড়ি জল্পেশ মেলা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভুল বলে দাবি করেছেন।
ভাইরাল ভিডিও দেখেই সেটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন বহু মানুষ। তবে ৪টে জিনিস লক্ষ করলেই ধরা পড়ে যায়, ভিডিওটি বাড়ির পাশের মেলার কি না! ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ১) নাগরদোলার পেছনে একটি অস্থায়ি টিনের ঘর রয়েছে, ২) যেখানে আহত ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় বসে পড়েছেন সেখানেই পাশ দিয়ে একটি কালো পাইপ লাইন রয়েছে (সম্ভবত বৈদ্যুতিক তারের জন্য), ৩) নাগরদোলাটিকে আপনার দক্ষিনে রেখে বা দিকে দুটি বড় গাছ দেখা যাচ্ছে, ৪) আহত ব্যক্তির পাশে ছোট্ট টিকিট কাউন্টারটির নীচে একটি কাঠের গজ রয়েছে। এরকমই আরও কিছু জিনিস লক্ষ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এরকম নানা বিষয় দেখেই বুঝে নেওয়া যায় ঘটনার বাস্তবতা।