‘আমি কিছু করিনি, মিথ্যে কেসে ফাঁসিয়েছে থানার বড়বাবু’, পুলিশকে দায়ী করে চরম পদক্ষেপ যুবকের

হাতে জোর করে ধারালো অস্ত্র ধরিয়ে ছিনতাইয়ের মামলা দেওয়া হয়—যা নিয়ে আদালতে পেশ করার পরেও হেপাজতে নিয়ে ফের মারধর করে পুলিশ। বাড়ি ফিরেও গঞ্জনা শুনতে হয় কাছের মানুষের থেকে। অবশেষে চরম পদক্ষেপ। সুইসাইড নোটে দায়ী করে গেল থানার ওসিকে।


বীরভূম: “আমি হেরে গেলাম। তবে আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দুঃখ করো না। দায়ী একমাত্র মল্লারপুর থানার ওসি রাজকুমার দাস। আমি নির্দোষ।”—যুবকের এমন হাহাকারে ভরা পাঁচ পাতার ‘সুইসাইড নোট’ প্রশ্ন তোলে পুলিশি আচরণের নৈতিকতা নিয়ে।

শনিবার সকালে বীরভূমের মল্লারপুর থানার মহুরাপুর গ্রামের ২৩ বছরের যুবক শঙ্খ মণ্ডলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় নিজ বাড়ি থেকেই। তৃতীয় বর্ষের কলেজ পড়ুয়া এই যুবক পড়াশোনার পাশাপাশি কেটারিং সার্ভিসে যুক্ত ছিল। পরিবারের দাবি, পুলিশি নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোয় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শঙ্খ।

জানা গেল, বিগত ১৬ জুন বন্ধুদের সঙ্গে ধাবাতে খেতে যাওয়ার সময় মল্লারপুর রেলগেটের সামনে এক লরি চালকের সঙ্গে বচসা হয় শঙ্খদের। অভিযোগ, খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায় এবং টানা চারদিন ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরবর্তীতে তাদের কামরাঘাটের ধারে নিয়ে গিয়ে হাতে জোর করে ধারালো অস্ত্র ধরিয়ে ছিনতাইয়ের মামলা দেওয়া হয়—যা নিয়ে আদালতে পেশ করার পরেও হেপাজতে ফের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

সুইসাইড নোটে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে থানায় ও জেলে চলা অমানবিক অত্যাচার। ২৮ দিনের জেল যাপন শেষে জামিনে ছাড়া পেলেও, সমাজ ও পুলিশের চোখে অপরাধীর তকমা শঙ্খকে মানসিকভাবে ধ্বংস করে দেয়। সুসাইড নোটে লিখেছে, “আমার স্বপ্ন ছিল বড় হওয়া। কিন্তু আমি হেরে গেলাম।”

পত্রে নিজের প্রেমিকাকে উদ্দেশ করে শঙ্খ লিখেছে, “তুমিও আমাকে চিনতে পারলে না। ভেবেছিলাম তোমার কাঁধে হাত রেখে জীবন কাটাব। কিন্তু তুমিও পাশে থাকলে না।” এই ঘটনার পর মল্লারপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে ওসির শাস্তির দাবি উঠেছে। বাবা শান্তির মণ্ডল জানিয়েছেন, “ছেলেকে ওসি ফাঁসিয়েছে। সে বারবার বলত মরবে, কিন্তু এভাবে যাবে ভাবিনি।”

About The Author