মাংসবিক্রেতার মেয়ের তিন বিশ্বরেকর্ড; হাওড়ার গ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে

হাওড়া: ধূলাগড়ের ব্যানার্জি পাড়ায় এখন উৎসবের আবহ। কারণ, এখানকার মাংসবিক্রেতার মেয়ে কোয়েল বর কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে একসঙ্গে তিনটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক জিতেছে। হাওড়ার দেউলপুরে বাবার ছোট দোকান, সংসারে টানাটানি, তবু স্বপ্ন দেখেছিলেন মিঠুন বর—মেয়েকে খেলোয়াড় বানাবেন।

মিঠুন নিজে একসময় যোগাসন আর দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। কিন্তু আর্থিক অভাবের কারণে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারেননি। সেই স্বপ্নই মেয়ের মধ্যে দিয়ে পূরণ করতে চেয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই কোয়েলকে ভারোত্তোলনের কৌশল শেখাতে শুরু করেন। প্রথমে কোয়েলের খুব একটা আগ্রহ ছিল না, কিন্তু ধীরে ধীরে সে এই খেলাকে ভালোবাসতে শুরু করে।

স্কুলে যেত সপ্তাহে দু’-তিন দিন, বাকি সময় অনুশীলন। ২০১৮ সালে অষ্টম দাসের তত্ত্বাবধানে ভারোত্তোলনের একটি কেন্দ্রে ভর্তি হয় সে। বয়স তখন মাত্র দশ। বাবার কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে, কোচের প্রশিক্ষণে জেলা, রাজ্য, জাতীয় স্তর পেরিয়ে পৌঁছে যায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে।

মিঠুনের পরিশ্রমের গল্পও অনন্য। ছেলেমেয়েকে অনুশীলনে নিয়ে যাওয়া, দোকান চালানো—সবই একসঙ্গে সামলেছেন। এমনকি একদিন রাত দেড়টায় মেয়েকে নিয়ে মাঠে দৌড়াতে চলে গিয়েছিলেন, পরে বুঝেছেন তখনও রাত! হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে আবার সকালে অনুশীলনে গিয়েছেন।

কোয়েলের ভাই সৌম্য বরও একজন ভারোত্তোলক, বর্তমানে পুণেতে বিএসএফের সঙ্গে অনুশীলন করছে। দুই ভাইবোনের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মিঠুন আর তাঁর স্ত্রী শ্রাবন্তী দিনের পর দিন কষ্ট করেছেন।

কমনওয়েলথে পদক জেতার পর কোয়েল জানিয়েছে, তার লক্ষ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন করা, তারপর অলিম্পিক্সে যাওয়া। তবে বাবা মিঠুন বলছেন, “মেয়ের যেটা ভালো লাগবে সেটাই করুক। আমি কোনও চাপ দিতে চাই না। ও নিজের মতো করে উন্নতি করুক।”

এই মুহূর্তে কোয়েল অহমদাবাদ থেকে উত্তরপ্রদেশে অনুশীলনে ব্যস্ত। কয়েকদিন পর বাড়ি ফেরার কথা। মা শ্রাবন্তী বলছেন, “ও পটলের তরকারি আর ইলিশ মাছ খেতে খুব ভালোবাসে। বাড়ি এলে ওর জন্য রাঁধব।”

About The Author