যারা নিজেরাই রাশিয়া থেকে পণ্য কেনে তাদের বাড়তি কথা শোনানো অযৌক্তিক, ট্রাম্পের বার্তা ভারতের

নয়াদিল্লিঃ রাশিয়া থেকে তেল আমদানির অভিযোগে ভারতের উপর শুল্ক বৃদ্ধির হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সেই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিল ভারত সরকার। সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতি জারি করে জানায়, “ভারতের বিরুদ্ধে এই ধরনের লক্ষ্যভিত্তিক সমালোচনা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অযৌক্তিক।”

বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি শুরু করে, যার ফলে ভারতের ঐতিহ্যগত জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হয়। সেই পরিস্থিতিতে ভারত বাধ্য হয় রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করতে, যাতে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এমন সিদ্ধান্ত ছিল “জাতীয় প্রয়োজন” থেকে উদ্ভূত, কোনও রাজনৈতিক অবস্থান থেকে নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “যাঁরা আজ ভারতের সমালোচনা করছেন, তাঁরাই নিজেরা রাশিয়ার সঙ্গে বিপুল পরিমাণে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পণ্য বাণিজ্য করেছে, এবং ২০২৩ সালে পরিষেবা বাণিজ্য হয়েছে ১৭.২ বিলিয়ন ইউরো। শুধু তাই নয়, ইউরোপের LNG আমদানি ২০২৪ সালে ১৬.৫ মিলিয়ন টন ছুঁয়েছে, যা ২০২২ সালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।”

বিদেশ মন্ত্রক জানায়, ইউরোপ-রাশিয়া বাণিজ্য শুধু জ্বালানি নয়, বরং সার, খনিজ, রাসায়নিক, লোহা-ইস্পাত, যন্ত্রপাতি ও পরিবহণ সামগ্রী পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যদিকে, আমেরিকা এখনও রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, প্যালাডিয়াম, সার ও রাসায়নিক আমদানি করছে—যা তাদের পারমাণবিক ও বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের জন্য অপরিহার্য।

এই প্রেক্ষিতে ভারত সরকার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, “যে দেশগুলি নিজেরাই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে, তাদের পক্ষ থেকে ভারতের সমালোচনা গ্রহণযোগ্য নয়। ভারত তার জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প Truth Social-এ পোস্ট করে অভিযোগ করেছিলেন, ভারত “massive amounts of Russian oil” কিনে তা আবার “open market”-এ বিক্রি করে মুনাফা করছে। তিনি বলেন, “They don’t care how many people in Ukraine are being killed by the Russian War Machine”—এই মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ভারতের এই পাল্টা বিবৃতি শুধু ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাব নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিচারিতা ও বাণিজ্যিক স্বার্থের মুখোশ উন্মোচন বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। এই বিবৃতি স্পষ্ট করে দেয়, ভারত তার জ্বালানি নীতিতে কোনও বিদেশি চাপের কাছে নত হবে না।

About The Author