সিন্ধু-জল বন্ধে ২৪ কোটি পাকিস্তানি অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি! রাষ্ট্রপুঞ্জে নালিশ ইসলামাবাদের

ভারতের তরফে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে কড়া আপত্তি জানিয়েছে পাকিস্তান। তারা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে এই ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছে এবং দাবি করেছে, এর ফলে প্রায় ২৪ কোটি পাকিস্তানির অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।

ইসলামাবাদের প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সময় থাকতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের লক্ষ্য করে সংঘটিত জঙ্গি হামলার জেরেই ভারত একাধিক কূটনৈতিক এবং জলসম্পদ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়, যার মধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করাও অন্যতম।

১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু নদী এবং তার পাঁচটি উপনদীর জল দুই দেশের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে ভাগ করা হয়। পাকিস্তান অভিযোগ করছে, ভারতের সিদ্ধান্তের ফলে তারা সিন্ধুর জলপ্রবাহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হচ্ছে।

জাতিসংঘের এক বৈঠকে পাকিস্তানের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি উসমান জাদুন ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “চুক্তি স্থগিতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই নদীগুলির প্রবাহ রুদ্ধ বা পরিবর্তন করা চলবে না। এটি পাকিস্তানের মানুষের জীবনসঙ্গিনীস্বরূপ।”

রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, ভারত এখন জলের মতো প্রাকৃতিক সম্পদকে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের অস্ত্রে পরিণত করছে। ইসলামাবাদের মতে, ভারতের কিছু রাজনৈতিক নেতার মন্তব্য উদ্বেগজনক এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবিক পরিস্থিতির ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানি প্রতিনিধি বলেন, “একটি দেশ যদি জলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। জাতিসংঘের উচিত এমন আইনভঙ্গের ঘটনাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা।”

সিন্ধু নদীর ছয়টি প্রধান উপনদীর মধ্যে তিনটির জল ভারত ব্যবহার করে (বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রু), আর বাকি তিনটি নদী (সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা) পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত। পাকিস্তানে কৃষি নির্ভরশীলতার ৮০ শতাংশই এই নদীগুলির জলের উপর নির্ভর করে।

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যদিও ১০ মে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবুও ভারত তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি এবং চুক্তি স্থগিতই রেখেছে। পাকিস্তান এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জে ফের নালিশ জানিয়েছে।

ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যতদিন না পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করছে, তত দিন জলচুক্তি পুনরায় চালু হবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য, “জল এবং রক্ত পাশাপাশি বইতে পারে না”—এই অবস্থানই ভারতের বর্তমান নীতিকে নির্দেশ করে।

About The Author