কসবা কাণ্ডে তৃণমূলের অন্দরে তীব্র বাকযুদ্ধ! মহুয়া বনাম মদন-কল্যাণ, মন্তব্যে ক্ষোভে ফুঁসছে দল, শোকজের মুখে মদন মিত্র।
কলকাতা: সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে রাজ্য তোলপাড়। অভিযুক্তদের সঙ্গে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের যোগসূত্রের অভিযোগের মাঝেই বিতর্কে জড়ালেন তৃণমূলের দুই প্রবীণ নেতা—সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক মদন মিত্র। তাঁদের মন্তব্য ঘিরে দলের অন্দরেই শুরু হয়েছে তীব্র মতবিরোধ। প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য: “যদি একজন বন্ধু তাঁর বান্ধবীকে ধর্ষণ করে, সেখানে পুলিশ কী করতে পারে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে যদি এই ঘটনা ঘটে, সেখানে কি পুলিশ থাকবে?”—এই মন্তব্য করে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসেন শ্রীরামপুরের সাংসদ।
মদন মিত্রের বক্তব্য: “ওই মেয়েটা যদি না যেত, তাহলে এমন ঘটনা হত না। উনি যখন যাচ্ছিলেন, সেই সময় যদি সঙ্গে করে আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে যেতেন বা কাউকে জানাতেন, এটা ঘটত না। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা তো সুযোগেরই ব্যবহার করেছে”—এই মন্তব্যের জেরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন কামারহাটির বিধায়ক2।
মহুয়া মৈত্রর পাল্টা প্রতিক্রিয়া: সোশ্যাল মিডিয়ায় মহুয়া লেখেন, “ভারতে নারীবিদ্বেষ দলীয় সীমানা দেখে না। পার্থক্য হল, যেই ভুল করুক না কেন, তৃণমূল কংগ্রেস এই জঘন্য মন্তব্যগুলির নিন্দা করে।” তিনি তৃণমূলের অফিসিয়াল হ্যান্ডেল থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করে কল্যাণ ও মদনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান: দলের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, “এই মন্তব্যগুলি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মদন মিত্রের ব্যক্তিগত মতামত। দল এই বক্তব্যের সঙ্গে কোনওভাবেই একমত নয় এবং এই মন্তব্যগুলিকে কড়াভাবে নিন্দা করছে।” দল আরও জানিয়েছে, “মহিলাদের ওপর অপরাধের ক্ষেত্রে বরাবরই জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। যারা এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়”।
মদন মিত্রকে শোকজ: বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মদন মিত্রকে শোকজ করেছে তৃণমূল। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর তরফে পাঠানো চিঠিতে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার জেরে তৃণমূলের অন্দরে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা আর ঢাকতে পারছে না দল। মহুয়া মৈত্রর প্রকাশ্য প্রতিবাদ এবং দলের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি—দুই মিলিয়ে স্পষ্ট, শাসকদলের অন্দরেই মতবিরোধ তীব্র আকার নিচ্ছে।