‘মরার আগে মরব না’, একহাতেই সংসার সামলান রাজগঞ্জের গোবিন্দ

ডিপ্রেশনের যুগে হাত পা থাকতেও কিছু করার দিশা পান না অনেকেই। অথচ এদিকে একটি হাত এবং দু’পা ছাড়াই দিব্যি কৃষিকাজ করে সংসার সামলাচ্ছেন এক সবজি ব্যবসায়ী। রাজগঞ্জের মাঝিয়ালি অঞ্চলের সাকিরাজোত গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ বৈদ্য (৫৪) গত পঁচিশ বছর ধরে দিব্যি কাজ করছেন। লোকের সাহায্যে মাঠে ফসল ফলান। এক হাতেই মোটর সাইকেল চালিয়ে বাজারে এসে সবজির দোকানে বসে পড়েন। গোবিন্দর কথায়, ‘হাত পা হারিয়ে পথে পথে ভিক্ষে করেন অনেকে। তবে যতদিন ক্ষমতা আছে কাজ করে বাঁচব। আমার দুই পা নেই, হাত নেই; এমনটা আমি মনেই করি না। ভগবান যেমন দিয়েছেন তাই মানিয়ে চলছি।’ গোবিন্দকে দেখে অনুপ্রাণিত গ্রামের মানুষ এবং অন্য ব্যবসায়ীরা।

গোবিন্দর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগে তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। ১৯৯৭ সালে পাহাড়ে কাজে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে। ঠিকমতো চিকিৎসা না হওয়ায় সারা শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়। তার জেরে দফায় দফায় প্রথমে ডান পা, তারপর বাঁ পা এবং তারপর বাঁ হাত কেটে বাদ দিতে হয়। শরীরেও একগাদা অপারেশন করতে হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে শারীরিক কাটছাটের পর আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন গোবিন্দ। সাকিরাজোত গ্রামে তার নিজস্ব বাড়ির সঙ্গে ৫ বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে সারাবছর নানারকম সবজির চাষ করেন। সেই সবজি ব্লকের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন। বাড়িতে কৃষিকাজ এবং হাটে বাজারে সবজি বিক্রি করে তিনি এখন স্বনির্ভর। তাঁর পরিবার বলতে স্ত্রী এবং এক ছেলে রয়েছে। ছেলে সুজন বৈদ্য (২৩) বলেন, ‘জন্ম থেকেই বাবাকে এমনই দেখছি। নিজেই নিজের সব কাজ করতে পারেন। বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে সহযোগিতা করি। তিনি আমার কাছে অনুপ্রেরনা।’

গোবিন্দ আরও বলেন, ‘প্রথমে যখন অঘটন ঘটল তারপরের পাঁচটা বছর ছিল জীবনের এক কঠিন সময়। তবে স্ত্রীর সহযোগিতায় সেই দুঃসময় কাটিয়ে উঠেছি। বর্তমানে সুখেই দিন কাটাচ্ছি।’ তাঁর এক প্রতিবেশী নারায়ন সরকার বলেন, ‘আগে গোবিন্দ স্বাভাবিক হেঁটে চলে বেড়াত। প্রায় পঁচিশ বছর আগের এক দুর্ঘটনার পর অন্য গোবিন্দর জন্ম হয়েছে। কথায় কথায় অবসাদে চলে যাওয়ার এই সময়ে গোবিন্দকে দেখে আমরা সবাই উৎসাহ পাই।’ সপ্তাহে দু’দিন রাজগঞ্জ বাজারে দোকান নিয়ে বসেন গোবিন্দ। পাশের ব্যবসায়ী রঞ্জিৎ কুড়ি বলেন, ‘উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়ত এতদিনে জীবনের হাল ছেড়ে দিত। তবে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। সকাল থেকে সন্ধ্যা সারাদিন দোকানে বেচাকেনা সেরে ঘরে ফেরেন বাকিদের মতই।’

About The Author