নয়াদিল্লি: রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জেরে ভারতের রপ্তানির উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাপাচ্ছে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক। ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি কমে যেতে পারে ৪৯.৬ বিলিয়নে।
আগস্ট ২৭ থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের রপ্তানিকারকদের জন্য এক কঠিন অধ্যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপাতে চলেছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আগেই ছিল, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকে। এবার রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার প্রতিশোধ হিসেবে আরও ২৫ শতাংশ যুক্ত হচ্ছে।
অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা GTRI জানাচ্ছে, ভারতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রপ্তানি—যার মূল্য প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার—এই নতুন শুল্কের আওতায় পড়বে। ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্য অনেক বেশি দামে বিক্রি হবে, এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।
ভারতের প্রাক্তন ICAI সভাপতি বেদ জৈন বলছেন, “রাশিয়ার তেল কেনা ভারতের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। সেটা বন্ধ করলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমাদের দুই বিপদের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হচ্ছে—অর্থনৈতিক অদক্ষতা না রপ্তানির ধাক্কা।”
এই শুল্কবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগবে শ্রমনির্ভর খাতে—যেমন টেক্সটাইল, গয়না, কার্পেট, চিংড়ি ও আসবাব। ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য এটা কার্যত মৃত্যুঘণ্টা। বহু কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে।
টেক্সটাইল ব্যবসায়ী ভদ্রেশ দোধ্যা বলেন, “এই শুল্কবৃদ্ধি আমদানিকারকদের জন্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। পুরো চেইনটাই খুব কম মার্জিনে চলে। এই বাড়তি খরচ শেষমেশ ভোক্তাদের উপরই পড়বে। আপাতত অলৌকিক কিছু ঘটার অপেক্ষায় আছি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধাক্কা শুধু ভারতের নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরেও পড়বে। মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মন্থরতা দেখা দিতে পারে। অর্থনীতিবিদ এসপি শর্মা বলেন, “মার্কিন অর্থনীতিতে ২ শতাংশের বেশি মূল্যবৃদ্ধি সহ্য হয় না। এই শুল্কবৃদ্ধি তাদের বৃদ্ধির হার আরও কমিয়ে দিতে পারে।”
বর্তমানে ভারতের মার্কিন রপ্তানি ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলার। FY26-এর মধ্যে তা কমে ৪৯.৬ বিলিয়নে নামতে পারে। যেখানে ৩০ শতাংশ রপ্তানি শুল্কমুক্ত থাকবে, ৪ শতাংশে ২৫ শতাংশ শুল্ক, সেখানে ৬৬ শতাংশ রপ্তানির উপর চাপবে ৫০ শতাংশ শুল্ক।
এই পরিস্থিতিতে চীন, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো ও তুরস্কের মতো প্রতিযোগীরা মার্কিন বাজারে ভারতের জায়গা দখল করতে প্রস্তুত। যেহেতু মার্কিন বাজার ভারতের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশ, তাই এই ধাক্কা দেশের শিল্প ও কর্মসংস্থানে বড়সড় প্রভাব ফেলতে চলেছে।