সীমান্তে নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ ও প্রযুক্তিগত যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ভারত শুরু করল এক নতুন যুগের। ৫২টি সামরিক নজরদারি উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্তে ভারতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলে আসছে আমূল পরিবর্তন। এতে যেমন সীমান্তে নজরদারি বাড়বে, তেমনই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও শক্তিশালী হয়ে উঠবে দেশ।
সীমান্তে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা উদ্বেগের মধ্যে এবার বড় পদক্ষেপ নিল ভারত। কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মোট ৫২টি সামরিক নজরদারি স্যাটেলাইট পাঠানো হবে, যার মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্ত এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোয় ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো যাবে।
‘অপারেশন সিন্দুর’ বদলে দিল সামরিক কৌশল
এই সিদ্ধান্তের মূল অনুপ্রেরণা এসেছে ‘অপারেশন সিন্দুর’ অভিযান থেকে। সেখানেই ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী বুঝেছে উপগ্রহ-নির্ভর রিয়েল-টাইম গোয়েন্দা তথ্য ও ড্রোন বিশ্লেষণের গুরুত্ব ঠিক কতটা। এই অভিজ্ঞতা থেকেই আরও বড় মাত্রায় নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে এল দিল্লি।
৩.২ বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা
২০২৪ সালের অক্টোবরে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে SBS-III (Space-Based Surveillance III) প্রোগ্রামের জন্য। এই প্রকল্পে প্রথম ধাপে ২১টি স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণ করবে ইসরো (ISRO)। বাকি ৩১টি তৈরি ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে। নজরদারি সংক্রান্ত সমস্ত কাজের তদারক করবে ‘ডিফেন্স স্পেস এজেন্সি’।
উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন স্যাটেলাইটগুলোতে থাকবে—
রাডার ইমেজিং ক্ষমতা, যা মেঘ, বৃষ্টি ও রাতে সমানভাবে কাজ করবে। থাকছে AI ইন্টেলিজেন্স, যা শত্রুর গতিবিধি চিহ্নিত করে স্বয়ংক্রিয় সতর্কতা পাঠাবে। রিয়েল-টাইম ট্রান্সমিশন সরাসরি সেনার কন্ট্রোল রুমে গোয়েন্দা তথ্য পাঠাবে। সীমান্ত অতিক্রম করলেই সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ট পাঠাবে Geo-fencing অ্যালার্ট সিস্টেম।
নজরদারির মূল কেন্দ্র এই নজরদারি মূলত কেন্দ্রীভূত থাকবে—
- ভারত-চীন ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে
- সিয়াচেন, লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশের সংবেদনশীল অঞ্চলে
- ভারত মহাসাগরীয় উপকূল ও চীনের সামুদ্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর
মহাকাশ প্রতিরক্ষা নীতির পথে ২০২৬ সালের মধ্যেই প্রথম ধাপে এই উপগ্রহগুলি উৎক্ষেপিত হবে। তিন মাসের মধ্যেই প্রকাশ পেতে চলেছে ভারতের ‘মিলিটারি স্পেস ডকট্রিন’, যা মহাকাশে প্রতিরক্ষা কৌশলের দিশা দেখাবে এবং চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
নতুন যুগের সূচনা এই কর্মসূচি শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের নিদর্শন নয়, বরং ভারতের ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তার স্তম্ভ হিসেবেও কাজ করবে। উপগ্রহ নজরদারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং দেশীয় সক্ষমতা একত্রিত করে গড়ে তোলা হচ্ছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক নতুন যুগ।