ডেস্ক রিপোর্ট: রাতারাতি হল কি সবার? সবাই ফেসবুকে ‘এই মর্মে ঘোষণা’ করছেন! এই ঘোষণা না করলে ফেসবুক বা মেটা নাকি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ছবি ‘বিনা অনুমতিতে’ই ব্যবহার করে ফেলবে। এমনটাই দাবি করা হচ্ছে ফেসবুকের এই ভাইরাল বার্তায়। নিমিষেই নজর কেড়ে নিচ্ছে সবার।
ভাইরাল বার্তায় লেখা হচ্ছে, ‘আমি এই মর্মে ঘোষণা করছি যে আমি ফেসবুক বা মেটাকে আমার কোন ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছি না। আগামীকাল একটি বড় দিন। এটা অফিসিয়াল। সকাল ৮:১০ মিনিটে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এটা টিভিতেও দেখানো হয়েছে। ভুলে যাবেন না, আগামীকাল থেকে নতুন ফেসবুক নিয়ম (অর্থাৎ নতুন নাম, মেটা) চালু হচ্ছে, যার অধীনে কোম্পানি আপনার ছবিগুলো ব্যবহার করতে পারবে। মনে রাখবেন, এর সময়সীমা আজই শেষ…’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
অর্থাৎ এই মেসেজে দাবি করা হচ্ছে, Facebook বা Meta নাকি অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারকারীর ছবি ব্যবহার করতে পারবে, যদি না ব্যবহারকারী একটি নির্দিষ্ট বার্তা কপি করে নিজের ফিডে পোস্ট করেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় না জেনে বুঝে যা খুশি ট্রেন্ড করানোই যেন এখন নতুন ট্রেন্ড! ইন্টারনেট প্রযুক্তির যুগেও ‘হুজুগে গা ভাসানো’ চলছেই। সম্প্রতি ভাইরাল এই বার্তাও কিন্তু সম্পূর্ণ গাঁজাখুরি! অনেকে না বুঝেই সতর্কতা ছড়াতে গিয়ে এই ‘ভুয়ো বার্তা’ নিজেদের ফিডে প্রচার করেছেন, যার মধ্যে বলা হয়েছে, নিজের ফটো, তথ্য বা পোস্ট সংরক্ষিত রাখতে ব্যবহারকারীকে সেই বার্তা পোস্ট করতেই হবে। কিন্তু বাস্তবে এই দাবি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। এমন কোনও বার্তা ফেসবুক ঘোষণা করেনি।
অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, ২০১২ সাল থেকেই এইরকম বার্তা বিভিন্ন রূপে ছড়িয়ে পড়ে, যেটির কোনও আইনি ভিত্তি নেই। Facebook বা Meta-এর পরিষেবা শর্ত অনুযায়ী, ব্যবহারকারীর কনটেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রাইভেসি সেটিংস ও অ্যাকাউন্ট পছন্দের ওপর নির্ভর করে, না যে ব্যবহারকারী তা কপি করে কোথাও প্রকাশ করছেন কি না।
তথ্য সুরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন বার্তা না শুধু বিভ্রান্তি ছড়ায়, বরং আসল নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবির সুরক্ষা রক্ষার জন্য দরকার সচেতনতা, প্রযুক্তিগত সতর্কতা এবং নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেট।
অনলাইনে নিরাপদ থাকার জন্য কিছু সাধারণ অথচ কার্যকর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে—প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক করা, দুই-স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু রাখা, অচেনা লিঙ্কে ক্লিক না করা, অচেনা ব্যক্তিকে বন্ধুত্বের অনুরোধ না পাঠানো, অ্যাপ পারমিশন নিয়ন্ত্রণ করা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, এবং পাবলিক WiFi ব্যবহারকালে ভিপিএন চালু রাখা।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, যতটা সম্ভব ফোন নম্বর, ঠিকানা, পরিবারের তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ না করাই নিরাপদ। কারণ একবার প্রকাশিত হলে সেই তথ্যকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
অর্থাৎ এই স্ট্যাটাসটি শুধুই একটি গুজব, যার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার মৌলিক ব্যবহারবিধিকে অস্বীকার করা যায় না। বরং এমন বার্তা কপি না করে তথ্য-ভিত্তিক সচেতনতা ছড়ানোই বর্তমান যুগে বেশি জরুরি।