৬ জুন লন্ডন ফেরার কথা ছিল মোনালি ও সানি পটেল দম্পতির। সব ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে আরও কিছুটা সময় কাটানোর ইচ্ছে তাঁদের সেই পরিকল্পনা পাল্টে দেয়। টিকিট বাতিল করে তাঁরা নতুন করে ১২ জুনের এয়ার ইন্ডিয়ার গ্যাটউইকগামী বিমানে যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেই যাত্রাই হয়ে উঠল তাঁদের শেষ পথচলা।
অহমদাবাদ থেকে গ্যাটউইকগামী AI-171 বিমানে ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র একজন প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। সেই বিমানে ছিলেন গুজরাতের আনন্দ শহরের ৩৩ জন যাত্রী, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন প্রবাসী। ‘এনআরআই শহর’ হিসেবেই পরিচিত আনন্দ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হয়েছিলেন মোনালি ও সানি।
দম্পতির তুতো ভাই জিগনেশ পটেল জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য গত দু’মাস ধরে ভারতে ছিলেন মোনালি। স্ত্রীকে সঙ্গ দিতে নিজের ব্যবসাও সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিলেন সানি। প্রথমে ৬ জুন ফেরার পরিকল্পনা থাকলেও, পরিবারের সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত সময় কাটানোর জন্য তাঁরা ফ্লাইট পিছিয়ে ১২ জুনের টিকিট কাটেন।
জিগনেশ জানান, ১২ তারিখে তিনি নিজের স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে মোনালিদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ‘‘তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না। আমার ছেলেকে খুব স্নেহ করতেন। সেদিন ওঁরা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, আশীর্বাদ করেছিলেন,’’ বলেন জিগনেশ।
সেই দিন দুপুর ১টা ২০ মিনিটে মোনালির কাছ থেকে শেষ মেসেজ পান তিনি—সবকিছু ঠিক আছে, এবং তাঁর স্ত্রীকে আশীর্বাদ জানানো হয়েছিল। মাত্র ১৮ মিনিট পর, অর্থাৎ ১টা ৩৮ মিনিটে উড়ান তোলে বিমানটি। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘানিনগরের লোকালয়ে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমানটি।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি আনন্দ থেকে অহমদাবাদে পৌঁছন জিগনেশ। পরে লন্ডনে থাকা মোনালির বাবা-মা—মুকেশ ও জয়শ্রী পটেলকে খবর দেন, প্রাথমিকভাবে আহত হওয়ার তথ্য দিলেও পরে তাঁদের মৃত্যুর সম্ভাবনার কথাই উঠে আসে। শুক্রবারই তাঁরা লন্ডন থেকে অহমদাবাদে পৌঁছন। ইতিমধ্যে তাঁদের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করেছে প্রশাসন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। প্রশাসনের মতে, এই প্রক্রিয়ায় অন্তত তিন দিন সময় লাগতে পারে।
জিগনেশ আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘‘দিদি এই দেশকে খুব ভালবাসতেন। বলতেন, আবার ফিরে আসবেন। সত্যিই, ফিরে আসলেন… তবে চিরনিদ্রায়।”