১২০ বছরেও অমলিন কণ্ঠ—বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

কলকাতা: আর ৫৫ দিন বাদেই বাঙালির ‘দুগ্গো পুজো’। অনেক জায়গায় মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই উৎসবে যদি একজন মানুষকে দুর্গাপুজোর প্রতীক হিসেবে ভাবা হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। মহালয়ার ভোরে তাঁর কণ্ঠেই বাংলার ঘুম ভাঙে—গ্রাম থেকে শহর, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। তাঁর কণ্ঠ ছাড়া মহালয়া যেন অসম্পূর্ণ।

আজ, ৪ অগস্ট ২০২৫, সেই কিংবদন্তির ১২০তম জন্মদিন। ১৯০৫ সালের এই দিনে কলকাতার আহিরীটোলায় জন্মেছিলেন বীরেনবাবু। তাঁর বাবা রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন একজন ভাষাতত্ত্ববিদ, আর সংস্কৃতের প্রথম পাঠ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ পেয়েছিলেন ঠাকুরমা যোগমায়া দেবীর কাছে। মাত্র আট বছর বয়সে শুরু হয় তাঁর চণ্ডীপাঠ। ছোটবেলা থেকেই তাঁর স্মৃতিশক্তি ও কণ্ঠস্বরের প্রশংসা শুনেছেন তিনি।

তবে কর্মজীবনের শুরুটা রেডিয়োতে নয়—১৯২৮ সালে রেলওয়ে সদর দফতরে। কিন্তু রেডিয়োর প্রতি টান ছিল অদম্য। বিকেলের ছুটির পর নিয়মিত যেতেন রেডিয়োর বন্ধুদের আড্ডায়। এরপর ‘চিকিৎসা সংকট’ নাটক পরিচালনার মাধ্যমে রেডিয়োতে তাঁর যাত্রা শুরু। সেই বছরই, এক অগস্টে, রেডিয়ো পেল তার সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠকে।

‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ অনুষ্ঠানে তাঁর যোগদান বাঙালির সংস্কৃতিতে এক যুগান্তকারী অধ্যায়। আগে সুরেলা কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের প্রচলন ছিল না। একদিন মজার ছলে তিনি পাঠ শুরু করেন, মাঝপথে থেমে যান। কিন্তু ততক্ষণে বাণীকুমার ছুটে এসে বলেন, “আরে থামলে কেন! বেশ তো হচ্ছিল!”—সেই মুহূর্তেই ইতিহাসের জন্ম।

১৯৯১ সালে বাংলা হারায় তার প্রিয় কণ্ঠকে। কিন্তু তাঁর কণ্ঠস্বর আজও জীবন্ত—প্রতিটি মহালয়ার সকালে, প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। রেডিয়ো মানেই যেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। আজ তাঁর ১২০তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাই সেই দরাজ কণ্ঠের মানুষটিকে, যাঁর উচ্চারণে আজও দেবীপক্ষের সূচনা হয়।

About The Author