বাংলাদেশি সন্দেহে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তারপর তাঁদের বিএসএফ হেফাজতে নেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের পুশব্যাক করে বাংলাদেশে। সেই তিন শ্রমিক আদতেই ভারতীয়!
বাংলা বলায় বাংলাদেশী সন্দেহ! আর তার জেরে মুম্বই পুলিশ বাংলার ৩ শ্রমিককে ধরে BSF-কে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাল। এমন অভিযোগ ঘিরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। বাংলাদেশে পাঠানো তিন ভারতীয় শ্রমিককে ফের নিয়ে আসা হল ভারতে।
মহারাষ্ট্র থেকে তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তারপর তাঁদের বিএসএফ হেফাজতে নেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের পুশব্যাক করে বাংলাদেশে। সেই তিন শ্রমিক আদতেই ভারতীয়, তাঁদের কাছে রয়েছে যাবতীয় নথি।
এ খবর পাওয়া মাত্রই কোচবিহার পুলিশের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয় বিএসএফের সঙ্গে। এরপর ফ্ল্যাগ মিটিং করে তাঁদের ফের ফিরিয়ে আনা হয় দেশে। বর্তমানে মাথাভাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দফতরে রয়েছেন তিন শ্রমিক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্দীপ গড়াই জানিয়েছেন, বাংলাদেশে পুশব্যাক হওয়া ওই তিন শ্রমিক হলেন নিজামুদ্দিন মণ্ডল, তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায়। মিনারুল শেখ, তাঁর মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়, মোস্তাফা কালম শেখ পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বাসিন্দা।
তাঁরা যখন মুম্বইতে কাজ করতেন। তখন তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে মুম্বই পুলিশ গ্রেফতার করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়।এরপর তাঁদের কোচবিহার জেলায় এনে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা খবর পাই ১৫৬ ব্যাটেলিয়নের রতনপুর বিওপি-এলাকায় জিরো পয়েন্টে বিজিবি-র হেফাজতে ওই তিন শ্রমিক রয়েছেন। খবর পেয়েই কোচবিহার পুলিশ তৎপর হয়। মুর্শিদাবাদ ও পূর্ব বর্ধমান পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদের নথি সংগ্রহ করা হয়। বিএসএফের কাছে আবেদন করা হয়। যাতে ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা হয়। কোচবিহার পুলিশের চাপে পড়ে বিজিবি-র সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং করে তিন জনকে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর মেখলিগঞ্জ থানায় দেওয়া হয়।”
বাংলাদেশে পুশব্যাক হওয়া নিজামুদ্দিন শেয়ার করেন নিজেদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, “মুম্বইয়ের নালাসুপাড়াতে আমরা থাকি। গত ৯ তারিখ রাত তিনটের সময়ে মুম্বই পুলিশ আসে। বলা হয়, বাঙালিতে চেকিং করা হচ্ছে। আইডি দিতে বলা হয়। আমরা কাগজপত্র নিয়ে পুলিশ চৌকিতে যাই। সব কাগজ দেখাই। তারপরও মোবাইল নেয়।” আর তারপরই বাধে গোল।
তিনি বলেন, “কল লিস্টে আমার এক বাংলাদেশি বন্ধুর নম্বর পায়। অনেক আগে ফোন করেছিল। তখন বলা হয়, আমাদের ভারতের সমস্ত নথিই মিথ্যা। তারপর আমাদের পানরেলে পাঠায়। সেখান থেকে পুনেতে। বিএসএফ হেড কোয়ার্টারে হ্যান্ড ওভার করে।”
খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই পুশব্যাক ইস্যুতে সোমবার বিধানসভাতেও সরব হন। মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, “যেখানে ডবল ইঞ্জিন সরকার, সেখানে বাংলায় কথা বললেই নিশানা। পরিচয়পত্র থাকলেও ভারতীয়দের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। বাংলায় কথা বললেই পুশব্যাক করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে।”
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “এটা একটা ভয়ঙ্কর অভিযোগ আসছে। ভারতবর্ষের মধ্যে কোথাও বাংলা ভাষায় কথা বললেই, বলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশি। বাংলাভাষায় তো বাঙালি কথা বলবেই। তারা তো ভারতীয়। সব নথি, তথ্য রয়েছে। কিন্তু, বাংলাভাষায় কথা বললেই তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। সত্যি কেউ অনুপ্রবেশকারী হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু, বাংলায় কথা বলেন এবং ভারতীয়, তাঁদের ধরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছে। আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি।”