ইঁদুর-জ্বর আতঙ্কের জের! অবশেষে ‘বিতর্কিত’ ফার্ম বন্ধের নির্দেশ জেলা শাসকের

জলপাইগুড়ি: রাজগঞ্জের সন্ন্যাসীকাটায় ইঁদুর জ্বরের প্রকোপ! টানা আন্দোলন, জনরোষ এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগের পর রাজগঞ্জের চেকরমারী গ্রামে অবস্থিত বিতর্কিত পোল্ট্রি হ্যাচারির বিরুদ্ধে অবশেষে কড়া পদক্ষেপ নিল জেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়িতে জেলা শাসকের দরবারে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে হ্যাচারিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে পোলট্রি ফার্ম (হ্যাচারি)-র ব্যবস্থাপনা নিয়ে একাধিক গাফিলতির নানা তথ্য উঠে আসে। যদিও হ্যাচারির কারণেই সম্প্রতি রোগ ছড়িয়েছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, তবে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে—পর্যাপ্ত গাফিলতির ভিত্তিতে আপাতত ফার্মটি বন্ধ রাখা হবে।

জেলাশাসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজগঞ্জের বিডিও, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, পলিউশন ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ, পোল্ট্রি ফার্মের প্রতিনিধিরা এবং শিল্প সংগঠনের নেতা সুরজিৎ পাল।

বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও, হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—আগামীকাল থেকেই মুরগি ও অন্যান্য সামগ্রী সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভবিষ্যতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিডিওকে ঘিরে বিক্ষোভ গ্রাম জুড়ে ইঁদুর জ্বরের প্রকোপে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাজগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়, অ্যাম্বুলেন্সে করে একের পর এক রোগীকে ভর্তি করানো হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়তি বেডের ব্যবস্থাও করেছে।

এই সংকটজনক অবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন রোগীর আত্মীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, বারবার জানানো সত্ত্বেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

গ্রামবাসীদের দাবি, ওই এলাকায় একটি মুরগির হ্যাচারি স্থাপনের পর থেকেই রোগের প্রকোপ বেড়েছে। একাধিক গ্রামে একসঙ্গে রোগ ছড়িয়ে পড়ায় তাঁরা হ্যাচারিটি বন্ধ করার জোর দাবি তুলেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এখনকার রোগ সেরে গেলেও ভবিষ্যতে আবার নতুন রোগ দেখা দিতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন ওই হাসপাতালে যান। সেখানে উপস্থিত এলাকাবাসীরা তাঁর সামনেই ফের হ্যাচারি বন্ধের দাবি তোলেন। কিন্তু বিডিওর তরফে কোনো আশ্বাস না পেয়ে রোগীর আত্মীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন, কেউ বলেন, “হাসপাতাল থেকে এবার কি শ্মশানে যাব?”

এক মহিলার অভিযোগ, “হ্যাচারি তৈরির পর থেকেই রোগের প্রকোপ। একজন সেরে বাড়ি ফিরলেই আবার নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে ঘরে ঘরে।”

এদিন হাসপাতালের বাইরে এলাকাবাসীরা বিডিওকে অনুরোধ করেন যাতে হ্যাচারি বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিডিও জানান, “এই বিষয়টি এককভাবে আমার দপ্তরের আওতায় পড়ে না। যদি পরিবেশ দূষণের কারণে রোগ ছড়ায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবে।”

তাঁর এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন উপস্থিত মহিলারা। হাসপাতালের বাইরে তাঁরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

About The Author