বেপাত্তা জামাইকে খুঁজে পেতে এক তান্ত্রিকের কথায় তুকতাক শুরু করেছিলেন শাশুড়ি। গুনিনের কথা মেনে রোজ রাতের অন্ধকারে রাস্তার মোড়ে পুজোর ফুল, লাল কাপড়, পান-সুপারি, ধূপকাঠি ইত্যাদি নানা কেরামতির জিনিস ফেলে দিয়ে আসতেন। এলাকাবাসীদের দাবি, ওই কারণেই নাকি সেখানে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছিল। কারা এভাবে রাতের আঁধারে এই সব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা জানতে এলাকাবাসীরা ঘাপটি মেরে ছিলেন। রাতে দুই মহিলাকে এইসব করতে দেখেই হাতে নাতে ধরে ফেললেন প্রতিবেশীরা। বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে খান্ত হলেন এলাকার মানুষ। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে মালদা শহরের কৃষ্ণপল্লী এলাকায়।
জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জামাই নিরুদ্দেশ। আর জামাইকে সংসারে ফিরে পেতেই গুনিনের নিদান অনুযায়ী তিনমাথার মোরে রোজ লাল কাপড়, জবা ফুল ফেলতেন দুই মাঝ বয়সী মহিলা ঝুমা (৪৫) এবং অঞ্জলি দাস। ঝুমা দাসের মেয়ে সীমার বিয়ে হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। তাদের এক নাবালিকা কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে মেয়ে সিমার কোন সম্পর্ক নেই। বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বলেই নাকি জামাই খোকন দাস ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছে।
এরপরই বাড়ির একমাত্র জামাইকে ফিরে পেতেই শাশুড়ি ঝুমা দাস ও তার বোন অঞ্জলি দাস গুনিন, ওঝার দ্বারস্থ হন। সুজাপুর এলাকার এক গুনিন নিদান দেন, রোজ নিয়ম করে এলাকার তিনমাথা মোড়ে ওইসব জিনিস অন্ধকার রাতে রেখে দিয়ে আসতে হবে। তাহলেই নাকি জামাই ঘরে ফিরবে। গুনিনের এমনই কুসংস্কারের খপ্পরে পড়ে শাশুড়ি ঝুমা দাস জামাইকে ফিরে পেতে কৃষ্ণপল্লী এলাকার তিনমাথার মোড়ে প্রায় দিনই নানান ধরনের জিনিস রাখতে শুরু করেন। যার মধ্যে কখনো লাল কাপড়, কখনো জবা ফুল মিষ্টি, আবার কখনো কাপড়ের মোড়া সুপারি ও ধূপকাঠি। ঘটনার পর থেকেই নাকি পাড়ায় নানান অঘটন চলছিল।
এদিকে এলাকার একাংশ বাসিন্দাদের বক্তব্য, তিন মাথার মোড়ে এরকম ভাবে যত্রতত্র মন্ত্রপুত সামগ্রী ফেলতেই পাড়াতেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কখনো কারোর এক্সিডেন্ট হচ্ছে। আবার কেউ অসুস্থ হচ্ছেন। কারা এই কাজ করছে তা নিয়ে ফাঁদ পেতে ছিল ওই এলাকার মহিলারা। অবশেষে শুক্রবার রাতে এই দুইজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলে কিল-ঘুষি দেন এলাকারই মহিলারা।
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে অবশেষে পুলিশ ওই দুই মহিলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, সম্পূর্ণ বিষয়টি কুসংস্কারচ্ছন্ন। ওই দুই মহিলাকে আটক করা হয়েছে। এলাকার মানুষ নির্দিষ্ট অভিযোগ করলে গুনিনের খোঁজ চালানো হবে। প্রয়োজনে তাকে গ্রেফতারও করা হবে।
কৃষ্ণ পল্লী এলাকার বাসিন্দা রাখি ঘোষ জানিয়েছেন, এই দুই মহিলা অন্য কোনও এলাকার বাসিন্দা। তারা এই পাড়াতেই একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল। প্রতিদিনই তারা তিনমাথার মোরে তুকতাক করে নানান জিনিসপত্র ফেলেছিল। আমাদের ধারণা এর ফলে পাড়াতে অঘটন ঘটছে। তাই এদিন ওই দুই মহিলাকে ধরে তাদের বিষয়টি কাছে জানতে চাওয়া হয়। তখন তারা পুরো ঘটনাটি খুলে বলে। কোন এক গুনিনের পরামর্শ অনুযায়ী ঝুমা দাস জামাইকে ফিরে পেতে এইভাবে কাজ করছিল।