ইতিহাস গড়ল রবি! ৬ হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতার লাদাখের কাং ইয়াতশে শৃঙ্গ জয় করল রাজগঞ্জের যুবক রবি কুমার ঝাঁ। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে মনের জোরে। জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জের বাসিন্দা রবি ছোট থেকেই পাহাড়ের প্রতি টান, স্থানীয় ট্রেকিং দল ক্লাইম্বিং ফর পিসের হাত ধরে শুরু। সিকিমের গোচেলা, উত্তরাখন্ডের ঘিয়া বিনায়কের মতন উচ্চতম পাহাড়ী শৃঙ্গ আরোহণ করেছে ইতিমধ্যেই।
এবার লাদাখের কাং-ইয়াৎশে শৃঙগ জয় করল রবি। যা ৬২৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। রবির দলে ৭ জন ছিলেন, তাদের লিড করেছেন রবি এবং আরও এক পর্বতারোহী অনুপম চ্যাটার্জি। ভাগ হয়ে ১২ই আগস্ট তাদের এই অভিযান শুরু হয়। ৬ দিনের মাথায় শৃঙ্গে আরোহণ করে দলটি। মাঝে খারাপ আবহাওয়া কিছুটা বাধ সাধে। রবির সাফল্যে খুশি ক্লাইম্বিং ফর পিস দলের রাজগঞ্জের সদস্যেরা। তাদের তরফে তাপস কুমার রায় জানান, রাজগঞ্জের ইতিহাসে প্রথম কেউ ৬০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় পর্বত আরোহণ করেছেন, যা গর্বের বিষয়।
রবি জানিয়েছেন, ১২ই আগস্ট তাদের এই অভিযান শুরু হয়। দিল্লি থেকে মানালি হয়ে লে পৌছে প্রথমদিন দল পৌছায় সারা ক্যাম্পে। দ্বিতীয়দিন সারা ক্যাম্প থেকে ওমলুং যাওয়ার পথে প্রায় রাত হয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় মার্কা নদীর জল অন্তত বেড়ে যায় এবং একজন মহিলা পর্বতারোহী অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাকে নীচে নামিয়ে আনা হয়। তৃতীয় দিন থাংগুস হয়ে দলটি ১৬ তারিখ দলটি বেসক্যাম্পে পৌছায়। সেখানে আবহাওয়া খুব খারাপ থাকায় দলটিকে একদিন অপেক্ষা করতে হয় বেসক্যাম্পেই। অবেশেষে ১৭ তারিখ রাত ১১টায় দুটো দলে ভাগ হয়ে দলটি সামিট মার্চ শুরু করে। প্রথম দলের গাইড ছিলেন সোনম ছেত্রী যিনি ইন্ডিয়ান প্যারা কমান্ডো দলের প্রাক্তন সেনাকর্মী ছিলেন ও দ্বিতীয় দলটিকে রবি ও আরেক নামী পর্বতারোহী অনুপম চ্যাটার্জি লিড করেন। ৭জনের মধ্যে পুরণায় একজন হাই অল্টিচুট সিকনেসে অসুস্থ হয়ে পড়লে,তাকে নামিয়ে আনা হয় মাঝপথেই। অবশেষে ১৮ই আগস্ট প্রায় ১০ ঘন্টা চড়াই করে সকাল ৯টায় দলটি সামিট করতে সম্ভব হয়। রবির এই খবরে খুশী রাজগঞ্জবাসী। ফিরে এসে রবির সাথে যোগাযোগ করতে পেরে এই সংবাদ পেয়ে উৎফুল্ল অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় সকলেই। সবাই আশা রাখছেন রবি সুস্থ অবস্থায় এখন বাড়ি ফিরে আসুক। রাজগঞ্জ ইতিহাসে প্রথমবার এভাবে ৬০০০ মিটারের ওপরের কোন শৃঙগে পর্দাপন যেনো অন্যমাত্রাই যোগ করছে ব্লকের অ্যাডভেঞ্চার জগতের পাতায়।
রবির এই সাফল্যের ব্যাপারে ক্লাইম্বিং ফর পিস দলের পক্ষ থেকে তাপস কুমার রায় জানান যে,৬০০০ মিটারের ওপরের যে কোন পর্বত আরোহন একটা বিশাল দক্ষতার ব্যাপার।বিশেষ করে একটা দলকে যদি গাইড করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। সেই উচ্চতায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক বাধাবিপত্তির সাথে, কম অক্সিজেন ও হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাও একটা বিশাল ব্যপার। সেক্ষেত্রে প্রথম চেষ্টাতেই রবির এই সাফল্য রাজগঞ্জের জন্য সত্যি গৌরবের। পর্বতারোহন তথা বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারমূলক খেলাধুলায় যা নিশ্চিন্তে আগামী দিনে রাজগঞ্জে এক নুতুন দিশার সূচনা করবে। আগামী দিনে হয়ত কেউ এর থেকেও বড় সাফল্য নিয়ে আসবে এই ব্যাপারেও তিনি আশাবাদী।
লে থেকে রবি আরও জানিয়েছেন যে, যে কোন পর্বতারোহনে চড়াইয়ের থেকে উৎড়াই অনেক কঠিন। তাছাড়াও সকালে রৌদের তাপে বরফ গলে পথ খুব দূর্গম ও পিচ্ছিল করে তুলেছিলো। এক্ষেত্রে একই দড়িতে অনেকেই বাধা থাকায়, একজন পরে গেলে, পুরো দলটাই পাহাড়ী খাদে চিরকালের জন্য হারিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সুস্থ অবস্থায় নামতে যথেষ্ট তাদের সচেতন হয়ে পদে পদে বিপদ এড়িয়ে নামতে হয়েছে। তিনি আরও জানান যে বেসক্যাম্প ৫২০০ মিটার থেকে ৬২৫০ মিটার সামিট।প্রায় ১০০০ মিটারের থেকেও বেশী চড়াই হবার কারণে এই পর্বত জয় করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য কাজ।