রাজগঞ্জ: ঠিক ৪ বছর আগে আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত গিয়েছিল রাজগঞ্জের শিকারপুরের দেবী চৌধুরানীর মন্দির। সরকারের তরফে দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে শুরু হয়েছিল মন্দির পুনর্নির্মাণের কাজ। এরমধ্যে গিয়েছে লোকসভা এবং বিধানসভার নির্বাচন। রাজগঞ্জের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ইস্যু ছিল মন্দির নির্মাণ। তবে ৪ বছর কেটে গেলেও মন্দির নতুন করে চালু না হওয়ায় উঠছে প্রশ্ন।
২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, প্যাগোডার আদলে কাঠ ও টিনের তৈরি ঐতিহাসিক দেবী চৌধুরানির মন্দির এবং সেই সঙ্গে দশটি বিগ্রহ গভীর রাতে বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পরদিনই ঘটনাস্থলে হাজির হন মন্ত্রী গৌতম দেব। সরকারে তরফে মন্দির এবং বিগ্রহ দ্রুত নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
দেখতে দেখতে সেই ঘটনা আজ চার বছর পূর্ণ হল। সদ্য উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কলকাতা ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। অনেকেই ভেবেছিলেন ঘটনার চার বছর পূর্ণ হওয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ থাকলে এই মন্দিরের উদ্বোধন হবে। তবে সেটাও হল না। এইনিয়ে চরম হতাশা স্থানীয়দের মধ্যে। মন্দির পুননির্মান ও দশটি বিগ্রহ তৈরি সম্পূর্ণ হয়ে শিল্পীর কারখানায় প্যাকেট বন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কেন এখনও মন্দির উদ্বোধন করে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে না সেই প্রশ্নই তুলেছেন স্থানীয়রা।
মন্দিরের কেয়ারটেকার ভোলা ওরাও বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে মন্দির ও বিগ্রহ দর্শনের জন্য অনেকে আসছেন তবে কেন মন্দির বন্ধ তাদের জবাব দিতে হচ্ছে, অনেকে নানা কথা বলছেন, কি কারনে বিগ্রহ মন্দিরে আসছে না, তা আমার জানা নেই, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে মুখ ব্যথা হয়ে গেছে। তবে আমরা এর সঠিক কারন জানতে চাচ্ছি।
গত বছরের ২ নভেম্বর মঙ্গলবার ঐতিহাসিক দেবী চৌধুরানী মন্দিরের বেদি শোধন করার পর বুধবার পুনর্নির্মিত দেবী চৌধুরানী ভবানী পাঠক সহ দশটি কাঠের বিগ্রহ আসার অপেক্ষায় ঢাক ঢোল কাশর নিয়ে ছিলেন ভক্তরা। কিন্তু তা স্থগিত হয়ে যায়। সেই আশা পুরন না হওয়াতে একদিকে যেমন তারা হতাশ অপরদিকে ক্ষুব্দ। মন্দিরের সেবিকা নুরো বরাইক বলেন এই মন্দির কে ঘিরে জন্ম থেকে মৃত্যু আমাদের সমস্ত ক্রিয়াকর্ম হয়ে থাকে। যেদিন মন্দির পুড়ে যায় সেদিন আমরা মাতৃহারা হয়ে কেঁদেছিলাম আর যখন জানলাম নতুন মূর্তি আসবে সব দুঃখ কষ্ট ভুলে আনন্দে আত্মহারা হয়েছি সেই আনন্দ আবার মুছে গেল, কেন এমন হলো এই প্রশ্ন তিনি রাখেন । মন্দির সংলগ্ন হাটখোলা লাইনেল গোবিন্দ ওরাও, রমেশ্বর বেলি, বিরসাই ওরাও জানান দীর্ঘ দিন বাদে ভষ্মিভূত দেবি মাতাদের মূর্তি তৈরি হয়ে আসছে সেই আনন্দে আমরা স্বাগত জানাবার জন্য আমাদের আদিবাসী সাংস্কৃতিক বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সেদিন প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু সেই আনন্দে জল ঢেলে দেওয়াতে আমরা নিরাশ ,আমরা চাই দ্রুত মন্দিরে মূর্তি বসুক।
মন্দির কমিটির সভাপতি হিসাবে পদাধিকার বলে শিকারপুর চা বাগানের ম্যানেজার সুদীপ ভৌমিক বলেন কবে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হবে আমার কাছে খবর নেই শিল্পীর কারখানায় আমরা মূর্তি সম্পূর্ণ হয়ে আছে দেখে এসেছি ।মন্দির সম্পর্কে প্রচার পাওয়াতে কলকাতা কুচবিহার, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি থেকেও দর্শনার্থীরা আসেন কিন্তু নিরাশ হয়ে বাড়ি ফেরা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। মন্দির কমিটির আরেক সদস্য চা বাগিচার বড়বাবু , ফনি দাস বলেন এখন অনেকের মনে প্রশ্ন, মন্দির বিগ্রহ যখন তৈরি, তাহলে সরকারি গেরোতে তা কেন আটকা পড়ে আছে? নেপথ্যে কি শাসক দলের ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি?
বিষয়টি নিয়ে সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়ে নি বিরোধীরা। বিজেপি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন এই সব ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু না। এদিকে পিনাকী আচার্য জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেসের সভাপতির বক্তব্য দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের নামটা জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের একটা আবেগ, কিন্তু বর্তমানে শাসক দল যারা সরকারে আছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সব সময় নির্বাচনিক কেন্দ্র তাই হয়তো তারা আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোটের অপেক্ষায় আছে, ভোটের আগেই আগেই এটা উদ্বোধন করে তারা প্রচার চালাবে। কংগ্রেসের পাশাপাশি শাসক দলের ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি নিয়ে একসুর সিপিএমের। সিপিএমের রাজগঞ্জ ব্লক সম্পাদক রতন রায়ের বক্তব্য এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিল, বর্তমানে এরা সময় – বিশেষ বুঝে এটাকে উদ্বোধন করবে যাতে ভোট পাওয়া যায়।
ট্যুরিজিম ডাইরেক্টর জ্যোতি ঘোষ অবশ্য তেমন কিছু বলতে চান নি, তার বক্তব্য এটার উদ্বোধন যখন হবে তখন ঠিক জানানো হবে। এদিকে ডিএফও রঞ্জন গুহর বক্তব্য সরকারি প্রকল্প তাই সেটি পদ্ধতি অনুযায়ী হবে। ঘটনার প্রসঙ্গে স্থানীয় রাজগঞ্জ বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন কিছু কাজ এখনো বাকি আছে, তবে সব কিছু শেষ হয়ে জেলাশাসক চিঠি করলেই উদ্বোধন করা হবে। এসম্পর্কে জেলাশাসক এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সম্পর্ক হয়নি। এখন আর কত বছর লাগবে এই মন্দির উদ্বোধন হতে সেই দিনটির দিকেই তাকিয়ে আছেন চা বাগিচা আপামর সহ উত্তরবঙ্গবাসী।