হাইরোডে একের পর এক ছুটল অ্যাম্বুলেন্স, সাহায্যের হাত বাড়ালেন পুলিশ-বিএসএফ এবং আমজনতা। মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন স্থানীয়রা। ব্লাড ব্যাঙ্ক ও হাসপাতালে মানুষের ভিড়৷ যাতে আহতদের চিকিৎসায় রক্তের কমতি না হয়৷ কে বাম, কে রাম, কে তৃণমূল? মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ঝাপিয়ে পড়লেন সবাই৷ চিকিৎসক থেকে শুরু করে পুলিস-প্রশাসন সকলেই ঝাপিয়ে পড়েন৷ ট্র্যাফিক পুলিসের পাশাপাশি হাইওয়ে এবং হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়েন স্থানীয়রা৷
এদিন বিকেলে ময়নাগুড়িতে লাইনচ্যুত হয় বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের ১২টি কামরা। দুর্ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে ভয়াবহ ছবি। প্রথমটাই অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। শীতের বিকেলে ফাঁকা জায়গায় ঝুপ করে অন্ধকার নামে। অন্ধকারে দূর থেকে ঘটনাস্থল দেখে রীতিমত চমকে গিয়েছিলেন মানুষ। উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন স্থানীয়রা।
দুর্ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে তখন সাহায্যের স্বতঃস্ফূর্ত আবেদন ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে জারি করা হল হেল্পলাইন। রক্তের অভাবে যেন মরতে না হয় কাউকে। তাতে সাড়া দিয়ে প্রচুর মানুষ ছুটে গেলেন হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। রক্ত দিতে মানুষের ভিড় চোখে পড়ল। সামাজিক মাধ্যমে ছবিও ভেসে উঠল। প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন নেটাগরিকেরা। তাদের কথায়, মানবিকতার নিদর্শন রাখল উত্তরবঙ্গের মানুষ।
বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ ময়নাগুড়ি ঢোকার মুখে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস৷ লাইনচ্যুত হয় ট্রেনের ১২টি কামরা৷ হতাহতের সংখ্যা ৫০ হতে পারে বলে আশঙ্কা। যদিও রেলের তরফে ৩৭ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে৷ আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত করছে৷ আহতদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলিতে আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে৷
ময়নাগুড়িতে রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা, গুরুতর জখম হলে ১ লক্ষ এবং সামান্য আহতদের ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেবে কেন্দ্র। একথা জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। দুর্ঘটনার পর বেশকিছু ট্রেনের রুট বদল করা হয়। ঘুরিয়ে দেওয়া হয় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের যাত্রা পথ। শেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। তবে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোভিড নিয়ে বৈঠকে থাকাকালীনই দুর্ঘটনার খবর পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে টুইটে তিনি জানান, রাজ্যের পক্ষ থেকে সবরকম সাহায্য করা হবে। আহতদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ময়নাগুড়ি বিএড কলেজে রাতে থাকার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।