বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ। ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতায় জন্ম হয়েছিল মমতার। এবারে মমতার ৬৭তম জন্মদিন। রাত ১২টার পর থেকেই শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেছেন দলের নেতা কর্মীরা। দিদির জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অনুরাগিরাও। মমতার জন্মদিনে জেনে নেওয়া যাক তাঁর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের ৮ম মুখ্যমন্ত্রী। ২০১১ সালে ২০ মে শপথ নিয়েছিলেন। ১৯৭০-এ সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন মমতা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বাম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেশের সব থেকে কম বয়সী সাংসদ হন।
১৯৯১ সালে কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র থেকে পুনরায় সাংসদ নির্বাচিত হন। সেসময় নরসিমা রাও মন্ত্রিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানব সম্পদ উন্নয়ন, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী মনোনীত হন। (পরে ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪ এবং ২০০৯ সালের নির্বাচনে ওই লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।)
১৯৯২ সালে এক প্রতিবন্ধী মহিলা, যাকে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল তৎকালীন শাসক দল সিপিএম-এর বিরুদ্ধে, রাইটার্স বিল্ডিংয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেসময় তাঁকে নিগ্রহ এবং গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তিনি অঙ্গিকার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হয়েই সেই বিল্ডিংয়ে পুনরায় প্রবেশ করবেন নাহলে নয়।
১৯৯৭ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেস দল গঠন করেন। এর আগের বছর রাজ্যের শাসক দল সিপিএম-কে সাহায্য করার অভিযোগ এনেছিলেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ১৯৯৯ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগদান করেন। পরে ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী মনোনীত হন। ২০০০ সালে প্রথম রেল বাজেট পেশ করেন তিনি। এবং এক বছরে মোট ১৯টি নতুন ট্রেন চালু করেন।
২০০১ সালে এনডিএ জোটে মত পার্থক্যের কারণে জোট ত্যাগ করেন। পরে আবার ২০০৪ সালে জোটে ফিরে যান এবং আসেন এবং কয়লা ও খনি মন্ত্রকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে তিনিই প্রথম তৃণমূল সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনে তৃণমূল একাই ১৯টি আসন দখল করে এবং সেই সময় তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য রেলমন্ত্রী মনোনীত হন। ওই বছর ১৮ সেপ্টেম্বর এবং ২১ সেপ্টেম্বর প্রথম দুটি দুরন্ত এক্সপ্রেস চালু করান।
২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে ৩৪ বছরের বাম রাজত্ব ভুলন্ঠিত করেন। পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয় তৃণমূলের সরকার। সেই নির্বাচনে এককভাবে ১৮৪টি আসন দখল করে তৃণমূল। ২০ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরূপে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে অবশ্য ২০০৬ সালের নন্দিগ্রামের ঘটনা এবং সিঙ্গুর আন্দোলন মমতার মুখ্যমন্ত্রিত্বের পথ সুলভ করেছিল।
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মমতার নেতৃত্বে রাজ্যের ৩৪টি আসন দখল করে তৃণমূল। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এককভাবে ২১১টি আসনে জয়লাভ করে (মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে) সরকার গঠন করে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরূপে পুনরায় শপথ পাঠ করেন। সম্প্রতি ২০২১ সালেও পুনরায় বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে তৃণমূল এবং রাজ্যে শাসন ধরে রেখেছে। যদিও তৃণমূলের শাসনকালে সারদা-নারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি বিব্রত করেছে দলকে, তবে তাতে নির্বাচনে যে কোনও ফল হয়নি টা বলাই বাহুল্য।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী বলে নয়, একজন একরোখা রাজনীতিবিদ। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করে আজকের জায়গায় এসেছেন। তাঁর চলার পথে সকলকেই আপন করে নিয়েছেন। রাজ্য বাসীর কাছে তিনি ‘দিদি’ বলে সুপরিচিত। তাই সকলের কাছে তিনি দিদিস্বরূপ। গ্রাম বাংলার মানুষ অবশ্য তাঁর দেখানো জনদরদী স্কিম নিয়ে ভুলে আছেন, এমন অভিযোগ উঠছে বারংবার। তবে তাতে কর্ণপাত করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিদির মুখেই এই বাংলায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে খেলা হবে এবং জয় বাংলার মত স্লোগান। অবশ্য বিতর্কও কম নয় মমতাকে ঘিরে। তবে সেগুলিকে থোরাই কেয়ার!
আজ বাংলার দিদি অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন দলের কর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে রাজ্যের কোটি কোটি শুভানুধ্যায়ীরা।