‘জ্বালানি বন্ধ করে দিলে কেন?’, আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য

১২ জুন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 ড্রিমলাইনার বিমানটি ওড়ার ৩২ সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ে একটি মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেল ভবনে। ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু-র মধ্যে মাত্র একজন প্রাণে বেঁচে যান। সেই ঘটনার এক মাস পর সামনে এল প্রাথমিক রিপোর্ট।

মাত্র ৩২ সেকেন্ড… এর মধ্যেই ভেঙে পড়ে লন্ডনের উদ্দেশে ওড়া এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 ড্রিমলাইনার। বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে উঠে এল এমন তথ্য যা নাড়া দিচ্ছে গোটা বিমাননিরাপত্তা ব্যবস্থাকে। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৪১ জন যাত্রী ও ক্রু, কেবল একজন পাইলট প্রাণে বেঁচেছেন।

আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পরই বিমানটির ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ আচমকা বন্ধ হয়ে যায়। ‘ফ্লাইট ডেক’-এ পাইলটদের কথোপকথনে ধরা পড়ে উদ্বেগের ছাপ। ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের তথ্য অনুযায়ী, একজন পাইলট বলছেন, “তুমি জ্বালানি বন্ধ করে দিলে?”, অপরজনের জবাব, “আমি কিছু বন্ধ করিনি।”

তদন্তকারী সংস্থা জানায়, দু’টি ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’ অবস্থায় চলে গিয়েছিল—যা একেবারে অস্বাভাবিক। পাইলটরা ইঞ্জিন পুনরায় চালু করার চেষ্টা করেন, প্রথম ইঞ্জিন চালু হলেও দ্বিতীয়টি পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়।

ঘটনার পরে সক্রিয় হয়ে যায় ‘Ram Air Turbine’ (RAT), যা নির্দেশ করে মূল বৈদ্যুতিক সংযোগে সমস্যার সম্ভাবনা ছিল। শেষ মুহূর্তে বিমানটি আহমেদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাস ভবনে সজোরে ধাক্কা মারে। ঘটাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণে গোটা কাঠামো বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

তদন্তে প্রাথমিকভাবে অন্তর্ঘাত, পাখির ধাক্কা বা আবহাওয়া জনিত কোনো কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মানবিক ভুল বা যান্ত্রিক ত্রুটি—এই দুটি সম্ভাবনা এখন মুখ্য।

প্রকৃত কারণ জানতে পুরো বিমান সংক্রান্ত প্রযুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। AI-171-এর মতো উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন বিমানে এমন বিপর্যয় কীভাবে ঘটল, সেই প্রশ্ন এখন গোটা দেশের বিমান ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে।

এই বিষয়ে পরবর্তী তদন্তপর্বে পাইলটের লিখিত বিবৃতি, কারিগরি দলের রিপোর্ট এবং বিমান সংস্থার অভ্যন্তরীণ ম্যানুয়াল বিশ্লেষণ করা হবে। সবমিলিয়ে এই দুর্ঘটনা হয়তো ভবিষ্যতের বিমান প্রযুক্তি নীতিতে একটি বড় সংশোধনের বার্তা দিচ্ছে।

এক ঝলকে

  • প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বিমানের দুই ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’ অবস্থায় চলে যায়, যার ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
  • ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে ধরা পড়ে দুই পাইলটের কথোপকথন— “জ্বালানি বন্ধ করে দিলে কেন?” “আমি কিছু বন্ধ করিনি।”
  • পাইলটরা ইঞ্জিন রিলাইটের চেষ্টা করেন, কিন্তু দ্বিতীয় ইঞ্জিনটি আর চালু হয়নি।
  • অন্তর্ঘাত বা পাখির ধাক্কার সম্ভাবনা নেই, তবে যান্ত্রিক ত্রুটি বা মানবিক ভুলের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
  • RAT (Ram Air Turbine) সক্রিয় হয়ে যায়, যা ইঙ্গিত দেয় বিদ্যুৎ সরবরাহেও সমস্যা হয়েছিল।

About The Author