Russia-Ukraine: দিশাহীন শান্তি বৈঠক! ৬০০০ সেনাদেহ ফেরালেও ‘যুদ্ধবিরতি’র দাবি মানল না রাশিয়া

কোনও স্পষ্ট অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দ্বিতীয় দফার আলোচনা! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির দাবি মানেনি রাশিয়া।

সোমবার তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনার দ্বিতীয় দফা কোনও বড় অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে, তবে উভয় পক্ষ আরও যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।

চুক্তির আওতায়, মস্কো আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৬,০০০ নিহত ইউক্রেনীয় সৈন্যের হিমায়িত মৃতদেহ কিয়েভে হস্তান্তর করতে সম্মত হয়েছে, দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনায় রাশিয়ান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী ক্রেমলিনের সহযোগী ভ্লাদিমির মেডিনস্কি বলেছেন।

রাশিয়ার প্রধান আলোচকের মতে, উভয় পক্ষ সমস্ত অসুস্থ এবং গুরুতর আহত বন্দীদের পাশাপাশি ২৫ বছরের কম বয়সীদের বিনিময় করতেও সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন যে মস্কো রাশিয়ান সৈন্যদের মৃতদেহ গ্রহণ করতেও প্রস্তুত, যদি ইউক্রেনীয় পক্ষের কাছে থাকে।

ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা তুরস্কে শান্তি আলোচনা শেষ করেছেন। এই বৈঠক সোমবার অনুষ্ঠিত হয় এবং মাত্র এক ঘণ্টার একটু বেশি সময় ধরে চলে। লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াস শহরে এক বক্তৃতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, উভয় পক্ষ তুর্কি মধ্যস্থতায় কিছু নথিপত্র বিনিময় করেছে এবং যুদ্ধবন্দীদের নতুন করে মুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তবে, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেনের বিস্ময়কর ড্রোন হামলার পর যুদ্ধ শেষ হওয়ার আশায় ভাটা পড়েছে। ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা রাশিয়ার পাঁচটি দূরবর্তী অঞ্চলে একযোগে ড্রোন হামলা চালিয়ে ৪০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এসব অঞ্চলের মধ্যে আর্কটিক, সাইবেরিয়া এবং রাশিয়ার সুদূর পূর্বাঞ্চল রয়েছে — যা ইউক্রেন থেকে প্রায় ৭,০০০ কিলোমিটার দূরে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা প্রধান ভ্যাসিল মালিউক জানান, এই জটিল ও ঐতিহাসিক অভিযানের প্রস্তুতিতে দেড় বছরের বেশি সময় লেগেছে এবং এটি রাশিয়ার সামরিক শক্তির জন্য বড় এক ধাক্কা।

জেলেনস্কি এই হামলাকে “উজ্জ্বল অভিযান” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের দাবি, এতে রাশিয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংস হয়েছে বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি, রাশিয়া গত রোববার ইউক্রেনের উপর সর্বোচ্চ সংখ্যক — মোট ৪৭২টি — ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার একটি প্রয়াস বলে মনে করা হচ্ছে।

শান্তি আলোচনায় কোনো আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি না থাকলেও, যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ হয়েছে। ১৬ মে অনুষ্ঠিত এক পূর্ববর্তী বৈঠকে উভয় পক্ষ ১,০০০ জন বন্দী বিনিময় করেছিল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দপ্তরের প্রধান আন্দ্রি ইয়েরমাক জানান, ইউক্রেন রাশিয়াকে জোরপূর্বক অপহরণ করা শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক তালিকা হস্তান্তর করেছে।

ইস্তাম্বুলের সিরাগান প্রাসাদে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। তিনি বলেন, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করা। তবে এখন পর্যন্ত মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোনো চাপ যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে সফল হয়নি। ইউক্রেন আলোচনায় আগ্রহ দেখালেও রাশিয়া তা কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছে।

এই আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল নেতৃত্ব দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভ্লাদিমির মেডিনস্কি। বৈঠকে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা তুর্কি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একটি U-আকৃতির টেবিলের দু’পাশে বসেন।

বর্তমানে যুদ্ধ থামানোর শর্তগুলোতে দুই দেশের মধ্যে এখনও বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা “ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার” বলেছে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে আরও লাভজনক পরিস্থিতির আশায় আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করছে।

এই পরিস্থিতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্রুত যুদ্ধ সমাপ্তির প্রত্যাশায় ভাটা ফেলেছে। মস্কো একটানা তৃতীয় রাতে কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় পুতিনের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, “পুতিন একেবারে পাগল হয়ে গেছেন!”

রাশিয়ার বিমান ঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার বিষয়ে রাশিয়া সরকার নীরব অবস্থান নেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই খবর খুব কম প্রচার করা হয়েছে। মাত্র এক মিনিটের সংক্ষিপ্ত বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়, এরপর তা সরাসরি ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ড্রোন হামলার দৃশ্যে স্থানান্তরিত হয়ে যায়।

জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার এসব সামরিক ব্যর্থতা তাদের আলোচনায় অংশ নিতে বাধ্য করবে। যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন গ্রীষ্মকালীন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তবুও কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, “রাশিয়াকে বুঝতে হবে তাদের ক্ষতির অর্থ কী — সেটিই তাদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসবে।”

About The Author