রাজগঞ্জ: বিতর্ক ও আলোচনা যেন প্রশান্তের ছায়াসঙ্গী। সদ্য, রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মণের বদলির নির্দেশ জানিয়েও স্থগিতাদেশ দিয়ে দিল নবান্ন। আর এতেই ফের তাঁকে নিয়ে আলোচনা। এবার প্রশান্ত’র ব্যক্তিগত ‘ক্ষমতা’ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
তবে এই বিডিওকে নিয়েই বা এত আলোচনা কিসের? খবরে প্রকাশ, ২০১৭ সালে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন এই প্রশান্ত বর্মন। কালচিনি ব্লকের বিডিও হিসেবে নিযুক্ত হতেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। নেপথ্যে আরটিআই! সেই পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় তিনি ১৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে আন্দোলন, মামলা, এখনও চলছে। আর তিনিই এখন রাজগঞ্জে বিডিও হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। গেল পঞ্চায়েত ভোটের পর রাজগঞ্জে এসেছিলেন। তারপর মাত্র আট মাসের মধ্যেই বদলির নির্দেশ আসে। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই নির্দেশ স্থগিত হয়ে যায়। এরপরই প্রশান্ত’কে নিয়ে ফের শুরু হয়েছে আলোচনা।
রাজগঞ্জের বিডিও-র বদলির নির্দেশ স্থগিত হওয়া নিয়ে প্রশান্ত বর্মণের ব্যক্তিগত ক্ষমতা নিয়ে তির্যক মন্তব্য সাংসদ জয়ন্ত রায়ের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছিলাম, ওর ক্ষমতা প্রচুর। সরাসরি ওপর মহলে নাকি যোগাযোগ রয়েছে। অনেক অফিসার তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেন না। নিজের বদলির নির্দেশ বদলে দিয়ে লোকটা দেখিয়ে দিল তাঁর ক্ষমতা। তবে তাঁকে নানা ভালো কাজেও দেখি অবশ্য। জানিনা উনি প্রচারের জন্য করছেন কিনা। নামটা আগে থেকেই ভীষণ চর্চিত।’
অন্যদিকে, রাজগঞ্জে কর্মভার সামলাবার পরই স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র সহ বিভিন্ন সরকারি কেন্দ্রগুলিতে আচমকা ঢু মেরেছেন তিনি। অবৈধ গতবিধিও ধরে ফেলছিলেন। সেই অবস্থায় স্থানীয় শাসকদলের নেতারা নাকি তাঁর ওপর রুষ্ট হয়েছিলেন। বিডিও বদলের নির্দেশ আসতেই সাধারণ মানুষের একাংশ সেই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। তবে সাত দিনের মধ্যেই বদলির নির্দেশ পাল্টে যায়। আইনের পরীক্ষার জন্য যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন বিডিও প্রশান্ত বর্মণ। তারপরই স্থগিতাদেশ জানায় নবান্ন। সেই ঘটনার পেছনে প্রশান্তের ব্যক্তিগত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন সাংসদ। স্থানীয় শাসকনেতাদের প্রসঙ্গে জয়ন্তবাবুর বক্তব্য, এখন এলাকার নেতাদের কথায় দল চলে না। উল্টে আধিকারিকদের ঘাড়ে ওপর থেকে দায়িত্ব দেওয়া থাকে। তাঁরাই ঠিক করেন, কথায় কোন নেতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত বাবুর এমন মনে করা নিয়ে তৃণমূলের জেলা সম্পদক বিকাশ মালাকারের দাবি, সরকার কিছু বুঝেই কোনও নির্দেশ জারি করে। সবটা সরকারি ব্যাপার। এই নিয়ে নেতাদের মন্তব্য করা সাজে না।
এই নিয়ে রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ও কার্যত একই কথা বলেছেন। রাজগঞ্জের বিডিও বদলি হবেন কি না তা, সবটাই ঠিক করবে রাজ্যের প্রশাসনিক মহল। এই ব্যাপারে স্থানীয় দলীয় নেতাদের কোনও প্রভাব থাকতে পারে না।
এদিকে, যাকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই প্রশান্ত বর্মণ অবশ্য এই নিয়ে খোলাখুলি কোনও প্রতিক্রিয়া জাহির করতে নারাজ। তবে তিনি একান্তে বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে কেউ প্রথম হয়ে এই পদে আসিন, তা অনেকেরি চক্ষুশূল। ‘আমি দুর্নীতি করে বিডিও হয়েছি কি না সত্যিটা আগামীদিনে জানবেন সবাই।’