রাজগঞ্জ: ভোট যায় ভোট আসে, কিন্তু চা বাগানের ছবিটা বদলায় না। বাগানে চা শ্রমিকের কাজ করে যা জোটে, মূল্যবৃদ্ধির বাজারে এই দিয়ে খোরপোষ জোগাড় করতেই ঘাম ছুটে যায়। সমাজের মূল স্রোতে নিজেদের তুলে ধরার ইচ্ছে থাকলেও সেই স্বপ্ন আর সত্যি হয় না। সরকারি প্রকল্প সেই সুযোগ দেয় না বলে হামেশাই অভিযোগ ওঠে। উত্তরবঙ্গের চা মহলে এমন ছবি নতুন কিছু নয়। ভোট এলেই রাজনীতির ইস্যু হয়ে ধরা দেন আদিবাসী চা শ্রমিকেরা। ভোট গেলে আর খোঁজ রাখে না কেউ।
নির্বাচনের আবহে রাজগঞ্জের শিকারপুর চা বাগানে আদিবাসী বঞ্চনার বিষয়গুলি তুলে ধরে বাম প্রার্থীর প্রচারে নজর কাড়লেন বাগানের মেয়ে মায়া বেণী।
বৃহস্পতিবার সেখানে ভোটের প্রচারে এসেছিলেন জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনের সিপিআইএম প্রার্থী দেবরাজ বর্মণ। দেবরাজের প্রচারে শিকারপুরে অগ্রদূতের ভূমিকায় দেখা গেল মায়াকে। সে নিজে এমএ পাশ করেও সরকারি কাজের সুযোগ পাননি। সব ছেড়ে একতরফা অধ্যাবসায়ের সুযোগও নেই। তাই বাগানে কাজ করার পাশাপাশি ছোট ছেলে মেয়েদের পড়ান। যাতে তাদের কেউ শিখরে পৌঁছাতে পারে।
এদিন, বাগানের আদিবাসি শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করালেন মায়া। যুবতীর কথায়, নতুন করে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বাগানে দিনমজুরি পোষায় না তাই তাদের ছেলে মেয়েরা ভুটানে, গ্যাংটকের হোটেলে কাজ করেন। কেউ আবার সিকিমে মাল টানা গাড়িতে খালাসির কাজ করেন, শিলিগুড়ি যান রাজমিস্ত্রীর জোগানির কাজ করতে। মায়া বলেন, সে নিজেও এমএ পাশ করে চাকরি পাননি। বাগানের স্কুলে দৈনিক মজুরির ভিত্তিক বাচ্চাদের পাঠ দেন। বর্তমানে এসএসসি, প্রাথমিক নিয়োগ হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে, সেই টাকা দেওয়ার সাধ্য নেই।
বৃহস্পতিবার তাই দেবরাজের প্রচারে পা মিলিয়ে শ্রমিকদের সামনে তুলে ধরলেন বঞ্চনার কথা। প্রার্থীর হয়ে কথা বললেন স্থানীয় শ্রমিক সমির মুন্ডা, দিলু বরাইক, নারো ওরাওদের সঙ্গে। শ্রমিকেরা জানালেন, ২৫০ টাকা দৈনিক হাজিরায় তাদের সংসার চলে না। আগে বাগান থেকে তারা আলাদা রেশন পেতেন। এখন তার বদলে মাত্র ৯ টাকা মিলছে। বাগানে নতুন কাজ নেই তাই ঘরের ছেলেমেয়েরা বাইরে কাজে যান।
এই নিয়ে প্রার্থী দেবরাজ বর্মন বলেন, বাম আমলে রাজ্যে প্রতি বছর শিক্ষক নিয়োগ হত। এখনও কোনও চাকরিই নেই। হলেও দুর্নীতির আড়ালে চলে গেছে। শ্রমিকদের সামনে রেখে দেবরাজের আশ্বাস, ভোটে জিতলে লোকসভায় শ্রমিকদের বঞ্চনা তুলে ধরবেন তিনি।