জলপাইগুড়ি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে রাজগঞ্জের তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে দলের দুই মুখ নিয়ে তৈরি হয়েছে জোর জল্পনা। দু’পক্ষই প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে প্রবল আত্মবিশ্বাসী। একদিকে রাজগঞ্জের বর্তমান বিধায়ক খগেশ্বর রায় এবং অন্যদিকে রাজগঞ্জ তথা জলপাইগুড়ি বিধানসভার অন্যতম জনপ্রিয় নেতা কৃষ্ণ দাস। রাজগঞ্জের তিনবারের বিধায়ক খগেশ্বর রায় বিধায়ক হিসেবে বিধানসভার উন্নয়নমূলক কাজ এবং দলের একজন বলিষ্ঠ নেতা হিসাবে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
অন্যদিকে রাজগঞ্জ বিধানসভায় দলের ‘জননেতা’ হিসেবে অনেকেই কৃষ্ণ দাসের ওপর ভরসা করছেন। সামাজিক কাজকর্মের মাধ্যমে রাজগঞ্জ এবং জলপাইগুড়ি বিধানসভার গ্রামীন এলাকার মানুষ বিশেষ করে যুবসমাজের নজর কেড়েছে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের এসসি-এসটি-ওবিসি সেলের সভাপতি কৃষ্ণ দাস। এদিকে করোনাকালে লকডাউন-অতিমারিতে পথে নেমেছিলেন বিধায়কও, সে কথাও অস্বীকার করছেন না এলাকাবাসী।
দু’জনের পক্ষেই তৃণমূলের প্রার্থী হবার সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে জনপ্রিয়তার নিরিখে বিচার করতে গেলে উঠে আসে কৃষ্ণ দাসের নাম। অন্যদিকে দলের পুরানো নেতা এবং তিনবারের বিধায়ক হিসেবে বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের নাম তুলে ধরছে দল। দু’জনেরই কাজকর্মের গতিবিধি উপরমহলে জানাচ্ছে আইপ্যাক। এদিকে বর্তমান বিধায়কের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে দলেরই একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছে বারবার। কৃষ্ণ দাসের তরফেও নাম না করে একাধিকবার একাধিক বিষয়ে তাঁদের মধ্যেকার মতাদর্শের ফারাক ধরা পড়েছে।
এনিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপিও। বিজেপি তরফে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে দুই মূল নেতার বিরুদ্ধেই। বিজেপি তরফে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে মানুষের সমর্থন কুড়োচ্ছে কৃষ্ণ দাস। খগেশ্বর রায়ের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে বিরোধীদের। বিশেষ করে বিধায়ক হিসেবে খগেশ্বর রায় বেশ কয়েকবার বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন। কিছুদিন আগেই রাজগঞ্জে তাঁরই পুত্রবধু তার পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় হাজির হন। প্রবল অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয় বিধায়ককে।
যদিও, এসব বিজেপির চক্রান্ত বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও উত্তরকন্যা অভিযানে গিয়ে মৃত উলেন রায়কে ‘মদ্যপ’ বলে কটাক্ষ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বিধায়ককে। দলের জেলাভিত্তিক দায়িত্ব রয়েছে দু’জনের উপরই। রাজগঞ্জে তৃণমূলের দুইনেতার আলাদা আলাদা জনসভায় দু’জনকেই রাজগঞ্জের সম্ভাব্য তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। যদিওবা দুই নেতার একই মঞ্চে জনসভা বেশ বিরল ঘটনা বলেই মনে করে এলাকাবাসী, তবে যখন তাঁরা এক জায়গায় আসেন, সে সময় মজার বাকযুদ্ধ উপভোগ করেন দর্শকেরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও দাপট রয়েছে কৃষ্ণ দাসের।
দলের একটা বড়ো অংশ মনে করছে রাজগঞ্জে তৃণমূলের পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন বিধায়ক খগেশ্বর রায়, সেক্ষেত্রে জলপাইগুড়ি বিধানসভায় তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হতে পারেন কৃষ্ণ দাস। এ নিয়ে কৃষ্ণ দাস জানিয়েছেন, ‘পদ নয় মানুষের জন্য কাজ করাটাই বড় বিষয়।’ তৃণমূলের জনপ্রিয় মুখ হিসেবে এবং কাজের ব্যাপারে কৃষ্ণ দাসের ওপরই এলাকার মানুষ বেশি করে ভরসা রাখছে। তাছাড়া কদিন আগেই পিকের নির্বাচনী পরিকল্পনায় দলের নতুন মুখ হিসেবে বেশ জোরালোভাবে উঠে এসেছে কৃষ্ণ দাসের নাম। তবে সে সব জল্পনার অবসান ঘটাতে নজর রাখতে হবে কালীঘাটের সেই বাড়িতেই। দু-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।